ঢাকা //
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পূর্তিতে শহীদদের স্মরণে ছাত্র-জনতার ‘শহীদি মার্চ’ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শহীদি মার্চের পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি, মাদ্রাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
লাখ ছাত্র-জনতার ঢল রাজধানীর সড়কগুলোতে নেমে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাব-কলাবাগান-সংসদ ভবন-ফার্মগেট-কাওরানবাজার-শাহবাগ-রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় এই শহীদি মার্চ। এর আগে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হন।
এর আগে বেলা দুইটার মধ্যেই শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলে দলে হাজারো ছাত্র-জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমবেত হন। আগতদের বেশির ভাগের হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। বেলা আড়াইটার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করে।
শহীদি মার্চ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের ভাইয়েরা স্বাধীনতা আনতে গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছে, এই অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে আমরা আবারও রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।
সরেজমিন দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে দেশজুড়ে হতাহতের ঘটনায় শহীদদের স্মরণ ছাড়াও ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনে নিহত বীরদের স্মরণ করেছে ছাত্র-জনতা। বিকেল তিনটা থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আড়াইটার পর থেকে ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল তিনটার দিকে গণমানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায় রাজু ভাস্কর্যের চারপাশ।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে টিএসসি এলাকা। শিক্ষার্থীদের সারির মাঝখানে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বড় পতাকা স্থান পায়। শত শত শিক্ষার্থী দেশের পতাকা উড়িয়েছেন। অনেকের মাথায় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকাও দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ শহীদদের নাম ও ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সফল হোক সফল হোক, শহীদি মার্চ সফল হোক’, ‘শহীদদের কারণে, ভয় করি না মরণে’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ছাত্র-জনতার গণভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে ২য় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সে রক্ত এবং স্পিরিট বৃথা যেতে দেব না। এখনো অনেক ফ্যাসিস্টদের অস্তিত্ব রয়েছে, আমরা ফ্যাসিস্টদের এবং ফ্যাসিবাদী চিন্তা লালন করা মানুষদের বলতে চাই, এই স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। কোন চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট এই বাংলাদেশে হবে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে ভাইয়েরা এই স্বাধীনতা আনতে রক্ত দিয়েছে, আমরা তাদের রক্তের মূল্য দিতে যে কোনো সময় নিজেদের রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।
এ সময় তারা ৫ দফা দাবি জানান। গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শহীদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করতে হবে। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরু থেকে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে দেশজুড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে সারাদেশে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জেলায় জেলায় র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে স্থানীয় জনগণও অংশ নেয়।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করেছেন ছাত্র-জনতা। বিকেলে জেলা শহরের দশানী শহীদ স্মৃতি সৌধের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়। অন্যদিকে একই সময়ে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের সামনে আরও একটি র্যালি বের করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। পরে এই র্যালিটিও শহীদ মিনার চত্বরে এসে মিলিত হয়।
র্যালি ও সমাবেশে শিক্ষার্থীরা গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের স্মরণ ও রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্র-জনতাকে। ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ‘শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার চাই’ ‘শিক্ষার্থীদের বাংলায়, হামলা-মামলার ঠাঁই নাই’, ‘আপোস না সংগ্রাম’ এসব নানা বিপ্লবী স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
Editor and Publisher : Nityananda Sarkar,
News Editor- Arun Sarkar.