• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে দুর্নীতির কারিগর দুই ওসি একজন আরেকজনের পরিপূরক!

admin
প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ০১:০৭:৫৯
সিলেটে দুর্নীতির কারিগর দুই ওসি একজন আরেকজনের পরিপূরক!

ওসি তাজুল ইসলাম (বামে) ও রফিকুল ইসলাম (ডানে), ফাইল ছবি।
জামাল আহমেদ, স্টাফ রির্পোটার (সিলেট)


সিলেট জেলার জৈন্তা-গোয়াইনঘাট থানার দুর্নীতির কারিগর হলেন দুই ওসি একজন আরেকজনের পরিপূরক। একজন হলেন জৈন্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম অপরজন গোয়াইনঘাট থানার রফিকুল ইসলাম। এরমধ্যে সিলেটে দীর্ঘদিন যাবৎ যেভাবে আধিপাত্য বিস্তার করে আসছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম। এই দীর্ঘ সময়ে যেখানেই অবস্থান করেছেন সেখানেই চালিয়েছেন হরিলুট আর চাঁদা আদায় বাণিজ্য। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় থেকে। বিগত ২০২১ইং-তারিখের পহেলা জানুয়ারি মাসে যোগদান করেন কানাইঘাট থানায়। এরপর শুরু হয় তার চাঁদা আদায় বাণিজ্যের উত্তান। চোরাকারবারি সিন্ডিকেট গ্রুপদের তিনি ছিলেন প্রধান গডফাদার। কানাইঘাট এলাকাকে গড়ে তোলেন নিরাপদ অবৈধ ভারতীয় পণ্য আদান-প্রদানের অঙ্গরাজ্য। তৎকালীন সময়েও তার অনৈতীক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অনেকে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকঠ প্রতিকার দাবি করলেও অবৈধ টাকার জোরে নিজেকে রক্ষা করে ফেলেন। তিনি ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’র বিশ্বস্থ্য একজন এপিএস’র লোক। সেই হিসেবে তার বিরুদ্ধে আনিত কোন অভিযোগ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জেলা অফিসাররাও ব্যবস্থা নিতে ভয় পেতেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নিজের পদবী পাকাপোক্ত করতে চোরাইকৃত টাকা দিয়ে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারও বাগিয়ে নেন। ওই থানায় তিনি প্রায় একটানা দুইবছর ক্ষমতা কাটিয়ে নামে মাত্র বদলি হন পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার থানায়। রহস্যজনক কারনে সেখানে থাকে বেশি দিন বেগ পোহাতে হয়নি। হাতেগুনা কয়েকমাস’র পর আবারও সীমান্ত এলাকা জৈন্তাপুরে তাকে যোগদানের সুযোগ করে দেয়া হয়। শুরু হয় ফের দুই হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাইয়ের ধান্ধা। অদ্যবদি পর্যন্ত অদৃশ্য শক্তির কারনে দাপুটের সহীত জৈন্তাপুর মডেল থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।

চোরাকারবারিদের কাছ থেকে যেভাবে বাগিয়ে নিতেন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা-

তিনি জৈন্তাপুর থানায় যোগদানের সপ্তাহখানিকপর শুরু করেন ধরপাকড়। আতংকে এদিক-ওদিক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় শীর্ষ চোরাকারবারীদের। একপর্যায় টেবিলবন্ধি সবাই। প্রকাশ্যে চলে ধর কষাকষি। এতে যোগদেন উপজেলা পর্যায়ের অনেক সিনিয়র আওয়ামীপন্থি নেতাকর্মী ও কতিপয় স্থানীয় হলুদ সংবাদকর্মীরাও। শুধু ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা-পানের নামে গাড়ি প্রতি হাতিয়ে নিতেন ৫শ’ টাকা হারে চাঁদা।

এদিকে ওসি কারও কাছ থেকে মাসোহারা আবার কারো কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করতেন। চোরাকারবারীরা ওসি’র চাঁদা পৌছিয়ে দিতেন এসআই আশরাফুল’র মাধ্যমে। প্রতিদিন ভোর রাতেই দৈনিকের হিসেব ছাড়তেন ওসি নিজে উপস্থিত থেকে। দুই ভাগে বিভক্ত ছিল চাঁদা উত্তোলনের কৌঠা। একভাগ জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকা আরেকভাগ সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে রোড হরিপুর বাজার এলাকা। শুধুমাত্র হরিপুর বাজার চোরাব্যবসায়ীরা মাসোহারা চাঁদা দিতে হয় কুড়ি লক্ষ টাকা। জৈন্তাপুর বাজার ও সীমান্ত এলাকা থেকে দৈনিক রাতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতেন। হরিপুর এলাকার চাঁদা এসআই আশরাফুলের নিকঠ পৌছে দিতেন একসময়কার সিএনজি অটোরিকশা চালক আবুল ওরফে শীর্ষ চোরাকারবারী পিচ্ছি আবুল, শ্যামপুর গ্রামের রুবেল মেম্বার, বালিপাড়া গ্রামের কথিত আওয়ামী লীগ নেতা ও গ্যাসফিল্ডে কর্মরত জালাল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট গ্রুপ। বর্তমানে তারা সকলেই জিরো থেকে কোটি পতি বনে গেছেন। এছাড়াও কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন অত্র উপজেলায় থাকা বেশ কয়েকজন চোরাকারবারী। এই রাঘববোয়ালদের তালিকাও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের হাতে রয়েছে। পাশাপাশি ওসি নিজেও কালো টাকার পাহাড় গড়ে পুলিশের কতিপয় অসাধু সদস্যদের পকেট মানি হিসেবে ব্যবহার করে নিজের স্থানকে আকড়ে ধরে রেখেছেন।

অভিযোগ রয়েছে কোটিপতি বনে যাওয়া গোয়াইনঘাট থানার সাবেক ওসি এবং ওই ওসি একযোগে কাজ করে গেছেন। তারা উভয়ে ছিলেন একজন আরেকজনের পরিপূরক। এদের দুইজনের দ্বারা থানার দায়িত্বে থাকা সার্কেল ও জেলার সাবেক পুলিশ সুপারও কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তারাও ভূষিত হয়েছেন সম্মাননায় । তারা সকলেই ছিলেন আওয়ামী সরকারের দূসর। বর্তমান সময়ে এসেও থেমে নেই চোরাকারবার বাণিজ্য। এদের সাথে যুক্ত হয়েছেন কানাইঘাট উপজেলার আরেক শীর্ষ চোরকারবারি মাসুক। সম্প্রতি জৈন্তাপুরের ভারতীয় সীমান্ত নোম্যান্স ল্যান্ড ১২৯১,১২৯২,১২৯৩ পিলার এলাকা দিয়ে অবাধে ঢুকছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী। সেই এলাকার কোম্পানী কমান্ডার এখন ওসি তাজুলের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বা সংবাদ প্রকাশ করলে পড়তে হয় ষড়যন্ত্রমূলক হামলা-মামলায়।

এদিকে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, যেসকল এলাকা দিয়ে এসব অবৈধ ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়া হয় বেশিরভাগ রাস্তাঘাট এখন অচলাবস্থা হয়ে পড়েছে। এতে করে পরিবেশ’র ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের সরকারী মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি, খুঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফলোআপ।