• ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

অন্তর্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

admin
প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার, ২০২৪ ০০:৫৪:৪৬
অন্তর্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা //

শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কর্মকান্ডে সহায়তা করতে চায় বাংলাদেশের বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশ পুনর্গঠনে দেশটি কীভাবে সহায়তা করতে পারে সেটি উঠে এসেছে দুই দেশের আলোচনায়।

মার্কিন প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকার বিবেচনায় আর্থিক খাত এবং রাজস্ব খাত সংস্কারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘ইউএসএআইডি’।

শনিবার ঢাকায় আসার পর রবিবার মার্কিন প্রতিনিধি দলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন, অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক ব্যতীত বেশিরভাগ বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান আর বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।
দুই দেশের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এক মাসের কিছুটা বেশি সময়।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে পরিবর্তিত যে পরিস্থিতি এবং সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে ধ্যান-ধারণা সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই সফর একটি ভিত্তি হবে। সামনে আমরা এই আলোচনাকে বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ঢাকা সফররত ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিব, শ্রম সচিব, স্বরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা।

এদিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। রবিবার দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ কথা জানিয়েছে।
দূতাবাস বলেছে, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি দলটি অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করবো। কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।’

মার্কিন দল কী আশ্বাস দিয়েছে, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রথম যে আশ্বাস সেটি হচ্ছে অন্তর্বতী সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় এবং সেটির প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসের প্রথমে তারা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করেছি, তার সব খাতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

ভারত থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।

প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। এ ধরনের কোনো আলোচনায় আমরা মনে হয় এর আগে কখনো যাইনি। আমি অন্তত এ ধরনের কোনো আলোচনা করিনি।’

নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত নিয়ে ডোনাল্ড লুর কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আপনি যেসব বিষয় বললেন, আমার সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

শ্রম আইন নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘শ্রম আইন নিয়ে আমরা যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো তাদের অবহিত করেছি এবং তারা পদক্ষেপ সম্পর্কে নোট নিয়েছেন। এগুলোকে তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে স্বীকৃতি দেন। এক্ষেত্রে এ আলোচনাটা কন্টিনিউ করবে।’
তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা চলছে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে কি না এবং জিএসপি প্লাস ফিরে পাওয়া নিয়ে আলোচনার প্রশ্নে জসীম উদ্দিন বলেন, এই বৈঠকে এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। জিএসপি নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। এটার যে প্রক্রিয়া এ সম্পর্কে কথা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, ডিএফসি (ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন) থেকে অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি।
র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে এবং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, র‌্যাবের সংস্কার নিয়ে যে সমস্ত কাজকর্ম করছি, সেগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি। এটা একটা চলমান আলোচনা। নির্বাচন নিয়ে কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি।

বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জসীম উদ্দিন জানান, আমরা বলেছি, এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি ইস্যু। এটার সমাধান হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্প্রতি যে সব উন্নয়ন হয়েছে সেটার বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

দুপুরে অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্য ইউএসএআইডির উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর বলেন, আমরা অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এর আওতায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বতীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। আমরা এখন চুক্তি অনুযায়ী কাজ করব। এ চুক্তি মূলত সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
উপসহকারী প্রশাসক বলেন, এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে। আমরা স্বাস্থ্য, শাসন ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তরুণদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, তারা যাতে দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে, সেদিকে নজর দিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণ এখানে মূল অগ্রাধিকার।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে এ বার্তা দিয়েছেন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক বার্তায় জানায়, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে ভালো লেগেছে। আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।