• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় হাসি-খুশি ভাব উধাও

admin
প্রকাশিত ২১ সেপ্টেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ০৩:৪৮:৩৬
টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় হাসি-খুশি ভাব উধাও

ক্রীড়া প্রতিবেদক //


আলো আর অন্ধকারের মতো চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিংও হাত ধরাধরি করে এগোচ্ছে। বোলাররা সাফল্যের প্রদীপ জ্বেলে আশার আলো দেখালেও দিন শেষে সেটা ফিকে হয়ে গেছে ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। ৪৭.১ ওভার টিকে থেকে ১৪৯ রানে অলআউট একটি দলের লড়াকু মানসিকতা প্রকাশ করে কি? চেন্নাই টেস্টে সে দাবি করতে পারছে না বাংলাদেশ।

তাসকিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে ম্লান মুখে বললেন, ‘ব্যাটিংটা বেশি খারাপ হয়ে গেছে।’ নাজমুল হোসেন শান্তরা যে মানের ব্যাটিং করলেন, তা থেকে ইতিবাচক কিছু খোঁজার সুযোগ নেই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এ কারণেই হয়তো দিনের খেলা শেষে সমালোচনার কাঠগড়ায় তুলেছেন ব্যাটারদের। অথচ দেখুন, নতুন সকালও আলোকিত করেছিলেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।

ভারতকে ৩৭৬ রানে বেঁধে ফেলে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিলেন বোলাররা। কিন্তু জাসপ্রিত বুমরাহ, আকাশ দীপ, মোহাম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজার সমন্বিত বোলিং আক্রমণের কাছে ব্যাটাররা মুখ থুবড়ে পড়লে আর লড়াই করা হয়নি। চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে প্রথম দিন তবু বোলারদের কৃতিত্ব কিছুটা উপভোগ্য ছিল। গতকাল ভালো লাগার মতো বেশি কিছু ছিল না। হাসান ও তাসকিন বীরত্বে ড্রেসিংরুমে যে আনন্দ-আলো বিচ্ছুরিত হয়েছিল, দেড় সেশনে অলআউট হলে হতাশার অন্ধকারে হারিয়ে যায় সে আলো। প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ভারতের রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ার শঙ্কায়।
কারণ দ্বিতীয় ইনিংসের ৮১ রান মিলিয়ে ৩০৮ রানের লিড পেয়ে গেছে ভারত। ২৩ ওভারে তিন উইকেটে ৮১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছেন রোহিত শর্মারা।

প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাসান মাহমুদ বলেছিলেন, ভারতকে ৪০০ রানের নিচে বেঁধে রাখতে চান। কথা রেখেছেন তারা। দ্বিতীয় দিন ১১.২ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে অলআউট ভারত। তাসকিন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো বোলিং করে একের পর এক উইকেট শিকার করে সুপ্রভাত জানান। ৬ ওভারের স্পেলে ৮ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজা আগের দিনের ৮৬ রানেই কট বিহাইন্ড তাসকিনের বলে। ভাঙে রবিচন্দ্র অশ্বিনের সঙ্গে ১৯৯ রানের জুটি, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে ভারতের সেরা। তাসকিনের পরের শিকার আকাশ দীপ। সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিনের উইকেটটিও গেছে তাঁর দখলে। ভারতীয় ইনিংসে দাড়ি টেনে দেন হাসান শেষ ব্যাটার জাসপ্রিত বুমরাহকে আউট করে। ব্যাটের কানায় লেগে বল ফিল্ডার জাকির হাসানের হাতে যেতেই সেজদায় পড়েন হাসান। দ্বিতীয় দিন ৩৬ রান যোগ করতে পেরেছে স্বাগতিক শিবির। ভারতের মাটিতে ৫ উইকেট পাওয়া প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি বোলার হাসান। ৮৩ রানে ৫ উইকেট শিকার তাঁর। ভারতে প্রথম হলেও ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পাওয়া পঞ্চম বোলার তিনি। নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাকিব আল হাসান, সাহাদাত হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের দেশের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক আছে।

বোলারদের ভালো করার আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় হাসি-খুশি ভাব উধাও হয়ে গেছে। ৩৭৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৪৯ রানে। সাদমান ইসলামকে দিয়ে বিপর্যয়ের শুরু। জাসপ্রিত বুমরাহর বল খেলতেও ভয় পাচ্ছিলেন তিনি। কাঁপতে কাঁপতেই বোল্ড আউট হলেন ওপেনিং ওভারের শেষ বলে। আকাশ দীপের বলে জাকির হাসান ও মুমিনুল হকের বোল্ড হওয়া ছিল হতাশ করা। নবম ওভারের প্রথম বলে জাকির ড্রাইভ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করায় মিডল স্টাম্প উড়ে গেছে। মুমিনুল করেছেন গোল্ডেন ডাক। মুশফিকুর রহিম নেমে আকাশের হ্যাটট্রিক ঠেকান। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তাঁর জুটি না হওয়ায় ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সিরাজের বলে ক্যাচ দিয়ে ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক। মুশফিককে হতাশ করেন বুমরাহ। ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত ব্যাটিং লাইনআপ মেরামতের চেষ্টা করেন সাকিব। লিটন কুমার দাসকে নিয়ে ৯৪ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু জাদেজার বাজে বলে সুইপ খেলে লিটন ক্যাচ দিলে এ জুটি বেশি দূর এগোয়নি। সাকিবও জাদেজার শিকার। তিনি রিভার্স সুইপ খেললে বল ব্যাট থেকে বুটে লেগে উইকেটকিপার পন্তের গ্লাভসে জমা পড়ে। রিভিউ নিয়ে সাকিবের উইকেটটি আদায় করে নেয় ভারত। চোখের সমস্যা নিয়েও ৬৪ বলে ৩২ রান করেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিব-লিটনের মতো আরেকজন লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন, তিনি হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে হার না মানা ৫২ বলে ২৭ রান তাঁর। স্বীকৃত ব্যাটাররা যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে বোলারদের কাছ থেকে বড় স্কোর আশা করা চাপ বাড়ানো। এর পরও তিন পেসার হাসান, তাসকিন, নাহিদ মিলে করেন ৩১ (৯, ১১, ১১) রান। বাংলাদেশ ২২৭ রানে পিছিয়ে থাকলেও ফলোঅন করায়নি ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলছে তারা। রোহিত, জয়সোয়াল ও বিরাট কোহলি আউট হলেও টেস্ট জেতার মতো রান পেয়ে গেছে স্বাগতিকরা। শুভমান গিল ৩৩, ঋষভ পন্ত ১২ রানে অপরাজিত। তাসকিন, রানা ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন দ্বিতীয় ইনিংসে।