রাঙামাটি প্রতিনিধি //
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এখানে আইন শৃঙ্খলা কোনো অবস্থায় অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যারা আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটাবে, আমরা তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দিব না। ভবিষ্যতে যদি তারা আবার বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে, আমরা তাদের হাত ভেঙে দিব। তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলরে সহোযোগিতার কামনা করেছেন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি সেনানিবাসে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জাতিগোষ্ঠীর নেতা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে মতবিনিয়ম শেষে সাংবাদিকদের এক প্রেসব্রফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে সবাই বলেছেন আমরা সম্প্রীতি চাই। তবে কোথাও একটি ছন্দপতন হচ্ছে। ছন্দপতনের বিষয়ে সকলেই একটি শব্দ উচ্চারণ করছে, তা হলো ষড়যন্ত্র। বহিরে থেকে কোথাও একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাদের এই সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য। গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় সভায় একটি বিষয় উঠে এসেছে তা হচ্ছে – পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত। সেটা বের করতে সকলের সঙ্গে কথা বলে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে যেন প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার যায়। যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।’
এর আগে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে রাঙামাটি আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
আজ সকাল ১২টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি রাঙামাটি পৌঁছায়। রাঙামাটি সেনানিবাসের প্রান্তিক হলে প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক চলে। বৈঠকে স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পুলিশের আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত ওসমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, রাঙামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনায় পরিবহন ভাঙচুর এবং চালকদের মারধরের প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে দূর পাল্লার কোন যান ছেড়ে যায়নি। শহরেও সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, শহরে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মানুষ অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। পুরো শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সড়কে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। সাম্প্রদায়িক ঘটনার জেরে পাহাড়িরাও আজ সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলার সড়ক ও নৌপথে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা পালন করছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত এবং উভয় পক্ষের ৬৪ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর, মসজিদ, বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাঙামাটি শহরে এখনো ১৪৪ ধারা জারি রাখা আছে।