• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জৈন্তাপুরের গুয়াবাড়িতে চলছে অবৈধ পাথর উত্তোলন-মজুদের হরিলুট!

admin
প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর, সোমবার, ২০২৪ ২২:২২:১৭
জৈন্তাপুরের গুয়াবাড়িতে চলছে অবৈধ পাথর উত্তোলন-মজুদের হরিলুট!

ফাইল ছবি।
জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি //


সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার গুয়াবাড়ি পুরান মসজিদ পাহাড় পাদদেশ এলাকায় চলছে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন। এতে করে গুয়াবাড়ির সৌন্দর্য সৌন্দর্য ঘেরা পরিবেশ বিনষ্টের উপক্রম হয়ে পড়েছে। কতিপয় অর্থপিপাষু প্রভাবশালি ব্যাক্তি রাতের আধারে পাহাড় (টিলা) কেটে অবৈধ পন্থায় এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রেহাই মিলছেনা সমতল ভূমিও।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন রাত দুইটার পর থেকে শুরু হয় পাথর উত্তোলনের কাজ। পরবর্তীতে সেই পাথর ছোট হাইড্রোলিক মিনি ট্রাক দিয়ে পরিবহনযোগে জৈন্তাপুরের বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকঠ পৌছে দেওয়া হয়। দৈনিক ৪-৫ লক্ষ টাকার পাথর সাপ্লাই দেয় এই প্রভাবশালি চোরাইচক্র। এনিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে নামেমাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে পাথর উত্তোলনের চোরাই সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশ সদস্য এসআই আশরাফুল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আওতাধিন থাকা বাগাণে কাজ করা মালি’র ছত্র-ছায়ায় গড়ে উঠেছে এই পাথর খেঁকো চক্রটি। দীর্ঘদিন থেকে চলছে এই রমরমা পাথর চোরাই বাণিজ্য। এছাড়াও জড়িত রয়েছেন বেশ কয়েকজন চাঁদাবাজ হলুদ সংবাদকর্মীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন গুয়াবাড়ি পুরাণ মসজিদের আশপাশ এলাকা এখন গর্তে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু গর্তের সমারোহ। তারা বলেন, অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে অনেকে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। প্রতিবাদ করলে তাদের কপালে জুঠে ষড়যন্ত্রমূলক হামলা-মামলা ও নির্যাতন। তারা আরও বলেন, গুয়াবাড়ি এলাকাটি সবসময় নির্জন অবস্থায় থাকে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই এলাকায় কোন ডিউটি পুলিশ থাকেনা বলেও তারা দাবি করেন। রাতের অন্ধকারে সেই স্থানে অনেকে আসতে ভয় পান। এছাড়া কতিপয় অসাধু থানা পুলিশের সদস্যরাও প্রতিরাতে বড়ো অংকের উৎকোচ পেয়ে থাকেন। এই উৎকোচ হাতিয়ে নেন এসআই আশরাফুল। পাথরছাড়াও আশরাফুল ভারতীয় চোরাকারবারীদের কাছ থেকে প্রতিরাতে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা।

এদিকে স্থানীয় একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঐ এলাকায় কোন অভিযানে যাওয়ার পূর্বেই শর্তক করে দেন তার বাগাণ মালি সাইফুল। এতে সৎউদ্যমী অভিযান দিতে ব্যর্থ হন ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আজ সোমবার জানা গেছে, জনৈক ব্যক্তি আব্দুর রহমান, বাগাণ মালি সাইফুল, আলমগীর, শাহীন, জাকারিয়া ও রিমালের বসত বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ চোরাইকৃত পাথর মজুদ করে রেখেছেন। তাদের বাড়িতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেইজন্য বাঁশের বেড়া দাঁড় করিয়েছেন। পাশাপাশি একটি গার্ডওয়াল রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে বড়ো পলিথন দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে পাথরগুলো। প্রশাসনের চোখ এড়াতে পাহাড়(টিলা)’র উপরেও মজুদ রাখা হয়েছে আরও বেশ কিছু পাথর স্তুপ।এভাবেই চলছে তাদের নিত্যদিনের পাথর হরিলুঠের কার্যকলাপ। স্থানীয় মহল মনে করেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষসহ উপজেলা প্রশাসন কঠোর হলে এদের প্রতিহত করা সম্ভব। অন্যথায় গুয়াবাড়ি এলাকার অতীত ঐতিহ্য বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে আব্দুর রহমানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলে তার মুঠোফোন রিসিভ না হওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যান্যদের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করলে কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি।

চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে জানতে জৈন্তাপুর মডেল থানার এসআই আশরাফুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন রিসিভ হয়নি।

এবিষয়ে নবাগত জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান’র সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আজ সোমবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাই এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারবেননা। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন।

এব্যাপারে জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ওই এলাকায় এরআগেও অভিযান দেওয়া হয়েছে। রাতের আধারে ঐ এলাকায় অভিযান দেওয়া খুবই রিক্স হয়ে পড়ে তারপরেও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইফুল বাগানে মালির কাজ করে সে কিভাবে জানবে আমি কোন স্থানে অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি, এটা বানোয়াট কথা তারপরেও বিষয়টি দেখবো।