সরেজমিন বাঁধ ভাঙ্গন, ছবি-মর্নিংসান।
জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি //
ভাঙছে বেড়িবাঁধ ‘কাঁদছে মানুষ’ থেমে নেই বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেট চক্রের দৌড়াত্ব। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই বালু-পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। এছাড়া বড়গাং সারী-গোয়াইন বেড়িবাঁধ রক্ষা না করায় স্থানীয়দের সন্দেহের তীর এখন প্রশাসনের দিকে।
জৈন্তাপুরের বড়গাং নদীর পাশ দিয়ে ১৯৭৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড সারী-গোয়াইন বেড়ীবাঁধ প্রকল্প প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ নির্মান করে। সেখানে বসবাস করছেন সাতটি ওয়ার্ডের অসংখ্য মানুষ। রয়েছে বসতভিটা ও আবাদি জমি ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মূলত পাহাড়ি ঢল ও তীব্র নদীর স্রোত ছাড়াও সৃষ্ট বন্যা হতে নিরাপদ রাখার জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে সেই বাঁধটি বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
সারা বছর ধরে অব্যাহত ভাবে ভেঙেই চলেছে নদী সংলগ্ন উপকূলের রক্ষাকবচ এই বেড়িবাঁধ। বছরের সব মৌসুমেই অব্যাহত রয়েছে ভাঙন। বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙছে, আর চোখের ও নদীর জলে ভাসছে উপকূলের মানুষ। অথচ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজপাট ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষিপ্রাসাদ গ্রামের ফেরীঘাট বড়গাং ব্রীজ হতে ৩কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বালু উত্তোলন করছে একদল প্রভাবশালী শ্রমিক মহল। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। রহস্যজনক কারনে স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ছেনা। স্থানীয়রা এর প্রতিকার রোধে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন কাজের কাজ হচ্ছেনা।
প্রতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। হুমকির মুখে রয়েছে বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এখন বর্ষা গেলেও আতঙ্ক কাটে না। সারা বছরের ভাঙনে এখানকার মানুষ দিশেহারা। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যাবে।
জানা গেছে, বেড়িবাঁধ এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে নিম্নে ১৮০ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বালু-পাথর উত্তোলন সংগ্রহ করার কথা থাকলেও সিন্ডিকেট গোষ্ঠি স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকার একাধিক ব্যাক্তি প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন স্থানীয় ভাবে ২-৩ জন হলুদ সংবাদকর্মীসহ কতিপয় অসাধু থানা পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজ করে চলে এই বালু-পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। এতে জড়িত রয়েছেন ইউএনও অফিসের আরও একাধিক কর্তাব্যক্তি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওয়াপদার তৈরি বেড়িবাঁধের ঐ তিন কিলোমিটার এলাকা।
এরআগে ১৯৮৮ সালে ফেরিঘাট ব্রীজ পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ভাঙ্গন দেখা দিলে মানুষের বিরাট ক্ষতিসাধন হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে বাঁধ রক্ষায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে বড় বড় বোল্ডার পাথর দ্বারা পুনর্নির্মাণ করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, রাতের আধারে ওই বোল্ডার পাথরগুলোও নিয়ে গেছে পাথর খেকোর দল।
এ বিষয়ে পূর্ব লক্ষীপ্রাসাদ গ্রামের ইসমাইল আলী বলেন, দুই বছর আগে স্থানীয় লোকজন বালু উত্তোলনের নৌকা আটক করে ডুবিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে কুচক্রী মহল বিভিন্ন ভাবে হামলা,মামলার হুমকি প্রদান করে আসছে। তিনি বলেন এভাবে বালু উত্তোলন ও পাথর চুরি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আবদুল লতিব বলেন, ২০১৭-১৮ সনে বেড়িবাঁধ রক্ষার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।পরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরিন করিম সরেজমিন বাঁধের দূরাবস্থা দেখে ১৮০ ফুট পর্যন্ত নদীর অংশে লাল নিশানা ঝুলিয়ে দেন এবং নিশানার ভেতরের অংশ থেকে সব ধরনের বালু উত্তোলন ও পাথর চুরির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু কয়েকমাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পুনরায় রাতের আধারে সক্রিয় হয়ে উঠে বালু-পাথর খেকো চক্রটি।
আব্দুল হান্নান বলেন, বহুবার এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিষেধ দিলেও তারা কর্ণপাত করেছে না। এই চক্রের সাথে জড়িত স্থানীয় ব্যবসায়ী জমির মোল্লা, আমিন মিয়া, শেখর বাবু, রফিকুল, রুহুল আহমদ ও আনাইছ মিয়া সহ বেশ কয়েকজন।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকমাস পূর্বে মো ইসমাইল আলী নামক এক ব্যাক্তি বড়গাং বালু মহাল ইজারা নেন। তখন থেকে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন্ এলাকা হতে বালু উত্তোলনে বেপরোয়া হয়ে ওঠে চক্রটি।
এদিকে স্থায়ী প্রতিকার চেয়ে পূর্ব লক্ষীপ্রাসাদ গ্রামসহ পাশ্ববর্তী এলাকার সাধারণ লোকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এতেও টনক নড়ছেনা উপজেলা প্রশাসন কতৃপক্ষের।
সম্প্রতি (২১ সেপ্টেম্বর) বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে বারকি শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করতে গেলে গ্রামবাসীর সাথে তাদের বাক-বিতন্ডা হয়। বর্তমানে উভয়ের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এবিষয়ে জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিয়াজ পারভেজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মর্নিংসানকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তারা একটি প্রতিবেদন ইউএনও বরাবরে দাখিল করেছেন। ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারে একমাত্র উপজেলা প্রশাসন সেটা আমাদের কাজ না।
এনিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দায় সাড়া ভাব প্রকাশ করে বালু-পাথর উত্তোলন ও অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বেড়িবাঁধের পুনসংস্কার কাজ এখনও শুরু হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড়গাং এলাকায় কিছু যায়গা বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি বলেন, সার্ভেয়ার ও তসিলদার সরেজমিন তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছেনা।