শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি //
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শহরতলীর মহাজেরাবাদ এলাকায় অবস্থিত প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন চট্রগ্রামের যুবলীগ নেতা সেলিম মিয়া।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে, এসব অভিযোগ করেন শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিউ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী মো, আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, আমার মাতা হেওয়ালী বেগম (৭৫) নামে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মৌজা- বালিশিরা পাহাড়, ব্লক নং-০১, জেএল নং ৭৩, এসএ খতিয়ান নং ৮৫, এস এ দাগ নং- ৩৬, বিএস দাগ নং ২৫, পরিমান-৩.৫০ একর, রকম-বাগান রকম ভূমি। চৌহদ্দা- উত্তরে এস এ দাগ ২৮ ও ১১২ কাটাতারের পিলার দ্বারা চিহিৃত, দক্ষিণে: পাকা রাস্তা, এম আর খান চা বাগান রোড, পূর্বে: উত্তর দক্ষিণমূখী আমাদের বিক্রিত লম্বামান পাকা রাস্তা, রাস্তার সংলগ্ন পূর্বে দাগের বাকি অংশ অথ্যাৎ নালিশা ভূমি বিক্রিত রাস্তার এস এ ৩৬ দাগের ১.০০ একর জমি পশ্চিমাংশে অবস্থিত। পশ্চিমে এস এ দাগ ৩৭ এর পাশে কাটাতারের পিলার দ্বারা চিহিৃত।
আমি সুনামের সাথে শ্রীমঙ্গল শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাচ্ছি। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে নিউ মার্কেট এর স্বত্বাধিকারী এবং একাধিক বাসা বাড়ির মালিক বটে। আমি প্রতি বছর সরকারকে প্রায় এক লাখ রাজস্ব দিয়ে থাকি।
আপনারা জানেন উল্লেখিত বিবাদীগণ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর এবং যুবলীগের পদধারী। গত ৫ বছর ধরে আমার জমি জালিয়াতি করে দখলের পায়ঁতারা করেছিলো, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি থাকার কারণে আমার জমি দখল করতে পারে নাই।
আমার মায়ের নামে মাঠফরসায় মোট জমি ৩.৫০ একর জমি রেকর্ড হয়েছে। পরবর্তী ৫০ শতক জমি আর এস প্রিন্ট ফরসায় না উঠায় ২০১৬ইং সালে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৫৭৯/১৬ রেকর্ড সংশোধনী মামলা দায়ের করি। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। এরপর গত ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট চিহ্নিত ভূমিখেকো সিন্ডিকেট বাহিনীর হোতা শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মো. জসিম মিয়া ও আব্দুস শুকুর গংরা আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা আমাকে প্রাণনাশ ও গুম করার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় ২০১৯ সালে ২৫ মে রাতের অন্ধকারে জসিম ও শুকুরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের বালিশিরা মৌজার পাহাড় বøক ১, এর ৮৫ খতিয়ানের ৩৬ দাগের ১.০০ একর জমি তারা জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ওই রাতের পর থেকে ভূমিখেকো চক্রটি অদ্যবধি পর্যন্ত প্রতিদিনই জবর-দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
এব্যাপারে ২০১৯ সালের ২৭ আগষ্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করি। যার নং-৩৩২/২০১৯। এরপর শুকুর গংদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা নং ৫৮/২০১৯ইং স্বত্ব মামলা দায়ের করি। পরবর্তী এই মামলায় ৭/৪/২২ইং তারিখে কোর্ট কমিশন করা হয়। মামলাটি বর্তমানে চলমান।
কিন্তু অভিযুক্তরা আমি ও আমার স্বাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নানাভাবে হুমকি দিলে পরবর্তীতে আমি শ্রীমঙ্গল থানায় নন এফআইআর নং-১৪/২০, ০২/০২/২০২০ইং তারিখে ১০৭ ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করি।
এছাড়াও উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বেপোরোয়াভাবে ২০২০ইং সালের ১৪ জুন আমার মামলার স্বাক্ষী আব্দুলাহ আল মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ীচাপা দিলে গুরুতর আহতবস্থায় তাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জখম গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। চিকিৎসক এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে তার ডান পায়ের গোড়ালিসহ হাড় ভেঙ্গে যায় । এখনো আব্দুল্লাহ আল মামুন পুঙত্ব জীবনযাপন করছে। এই ঘটনায় মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আহত আব্দুল্লা আল মামুন বাদি হয়ে মোশারফ মিয়া,জসিম মিয়া ও মনির মিয়াকে আসামী করে একটি ফৌজধারী মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৬৪/২০।
এছড়াও ২০২২ সালে জসিম মিয়া গংরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করিয়া কিছু ডাকাত প্রকৃতির লোকজন নিয়া হামলা চালিয়ে প্রথমে আমার সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে আমার মায়ের নামে হেওয়ালী কটেজ ভাঙুচর করে কটেজের মালমালসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় । পরবর্তী ২০২২ সালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করি। মামলা নং-১৭৬/২২। পরবর্তী পুলিশ তদন্ত করে ৩৯৫/৪২৭/৩২৩/৩৪ পেনাল কোডে ডাকাতির মামলা প্রমানিত হওযায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিবাদী মো. সেলিম মিয়া, পিতা মো. জামদু মিয়া, সাং-দক্ষিণ কাট্রলী, ডাক-কাস্টম একাডেমী-৪২১৯, থানা ও উপজেলা-পাহাড়তলী, জেলা চট্রগ্রাম শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা বনোয়াট ও কাল্পনিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন,আমি তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিবাদী মো. সেলিম মিয়া ২৯/১১/২০২৩ইং সালে জসিম মিয়া গংদের বায়া হইতে জমি খরিদ করেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো ২০১৯ সাল থেকে আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও তিনি জেনে শুনে কেন জমি খরিদ করতে গেলেন?।
বিবাদী সেলিম মিয়া জমি খরিদ করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যে, আমাদের কেয়ার-টেকার হারুন ডালি ও মুরাদ হোসেনকে বাগান ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এমনকি পরবর্তী সেলিম গংরা আমি বাগানে প্রবেশ করলে আমাকেও হুমকি দিয়ে বলে আমার বাগান যেকোন সময় তারা দখল করে নিবে। তারপর আমি নিরুপায় হয়ে আমার নিরাপত্তার জন্য ১০৭ ধারায় নির্বাহী আদালতে ৩২২/২৪ ইং ধারায় মামলা দায়ের করি এবং জমির নিরাপত্তার জন্য ১৮৩/২৪, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৪৪ ধারা মামলা করি।
সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, বিবাদী সেলিম মিয়া সংবাদ সম্মেলনে একটি প্যারায় উল্লেখ করেছেন ১২৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৬৪নং দাগে ৭৬ শতক ও ৩৯ নং দাগে ১০ শতক মোট ৮৬ শতক জমি আমি দাবি করেছি এমনটি সত্য নয়। আপনাদেরকে অবগত করতে চাই যে, উনার জমি পূর্ববর্তী ৫৯০নং আমমোক্তারপত্র চৌহদ্দায় কোথাও কোন রাস্তা নেই। তার পশ্চিমে ৩৮ নং দাগের সীমানা হইতে বিবাদী সেলিম মিয়া জমি শুরু হয়েছে। ৫৯০নং আমমোক্তার নামা এক চৌহদ্দায় দলিল সৃষ্টি হয়েছে সেখানে কোন রাস্তা উল্লেখ নেই । পরবর্তীতে শুকুর গংরা জাল জালিয়াতি করে দুই চৌহদ্দিতে একটি দলিল সৃষ্টি করে । দলিল নং ২৬৪১।
জসিম মিয়া গংরা খরিদকৃত ২৩ শতক জমি ২৭১৩/১৯ নং দলিলের সহিত তার পূর্ববর্তী দলিল ৬/৮৯ইং ২৩.৫ শতক জমির চৌহদ্দা কোন মিল নেই। ওই দলিলের চৌহদ্দায় দেখা যায় যে দক্ষিণে ৩৮ নং দাগ এবং পশ্চিমে ৩৮ নং দাগ অথ্যাৎ তার পুরো জমিটাই ৩৮ নং দাগের পাশে ৩৭নং দাগ অথ্যাৎ আর এস ৬৩-৬৪ দাগের জমি।
আমার ৩৬ নং দাগের পাশে বর্তমানে সেলু মিয়া (লন্ডনী) এসএ ৩৭ দাগ ও বিএস ৬৪ দাগের জমি আমার প্রতিবেশি। আমার জমি উত্তরে খাজা টিপু সুলতান তাদেরকে পক্ষ করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে তাদের দাগ ৬৩,৩৯ তাদের দাগে ভূল রেকর্ড হওযায় ট্রাইব্যুনাল কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি।
সংবাদ সম্মেলনের আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল বলেন, বিবাদী সেলিম মিয়া সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন ১৩ আগস্ট সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি দাবি করেন জমির প্রকৃত মালিক তিনি নিজেই। তবে তার বক্তব্য সম্পূন্ন মিথ্যা ও বনোয়াট। প্রকৃত পক্ষে সেনা বাহিনী উভয়পক্ষকে নিয়ে ভূমি অফিসে বসে এসিল্যাল্ডসহ আমার মায়ের নামে যাবতীয় জমির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করেন এবং ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আমার দায়েরকৃত মামলার নতিপত্র পর্যলোচনা করেন। এসিল্যান্ড সাহেব বলেন, যেহেতু আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে সূরাহা করতে হবে। অন্যথায় সেনাবাহিনী বা আমার কোন এখতিয়ার নেই নিস্পত্তির । পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বিবাদী সেলিম মিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন যেহেতু আদালতের ব্যাপার , আদালতেই নিষ্পত্তি করতে হবে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষ চলে আসি।
Editor and Publisher : Nityananda Sarkar,
News Editor- Arun Sarkar.