কক্সবাজার প্রতিনিধি //
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দেশের সর্ব দক্ষিণ শেষ সীমানায় অবস্থিত এই দ্বীপ। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখেরও বেশি লোক এ দ্বীপে ভ্রমণ করেন।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে সরকারীভাবে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিলো। সম্প্রতি এ দ্বীপকে কেন্দ্র করে বঙ্গোপসাগরের ১৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সেন্টমার্টিন মেরিন প্রোটেকটিভ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
এমনিতে সমুদ্র উচ্চতা জনিত কারণে দ্বীপটি ডুবে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তার উপর অধিক পর্যটকের চাপ সেন্টমার্টিনের বিলুপ্তিকে তরান্বিত করছে। বাংলাদেশে সমুদ্র প্রেমিদের প্রিয় দ্বীপ সেন্টমার্টিন কি অচিরেই ডুবে যাবে? প্রশাসনিকভাবে সেন্টমার্টিন কক্সবাজারের টেকনাফের অধিনে থাকা একটি ইউনিয়ন।
টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মাঝে নাফনদীর মোহনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এটি টেকনাফের মূল ভূখন্ডের অংশ ছিলো।কিন্তু ধীরে ধীরে তা সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান দ্বীপের দক্ষিণ পাশ্ব জেগে উঠে।
তার ১০০ বছর পর দ্বীপের উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরে এর বাকি অংশ সমুদ্রে উঠে আসে। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সেন্টমার্টিন সারা পৃথিবীর মধ্যে ছিলো অনন্য। কিন্তু বর্তমানে এই দ্বীপের পরিবেশ বিপন্ন প্রায়।
গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সালে সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৪১ প্রজাতির প্রবাল ছিলো। মাত্র ৪ দশকে ১০১ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে।বর্তমানে মাত্র ৪০ প্রজাতি প্রবাল দ্বীপ ঠিকে আছে। ১৯৮০ সালে এই দ্বীপের চারদিকে প্রায় ১ দশমিক ৩.২এ বর্গকিলোমিটার প্রবাল আচার্ধ ছিলো।
বর্তমানে রয়েছে মাত্র ০ দশমিক ৩.৯ বর্গকিলোমিটার। মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে ৩ ভাগের এক ভাগও প্রবাল নেই। আন্তর্জাতিক গওসেচ সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা না নিলে ২৯৪৫ সালের মধ্যে সেন্টমার্টিন সম্পূর্ণ প্রবাল শুন্য হয়ে যাবে। ১৯৬১ সালে সেন্টমার্টিনে জনসংখ্যা ছিলো মাত্র ৭৫০ জন। বর্তমানে এই দ্বীপের জনসংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। মাত্র দুই দশকেরও কম সময়ে সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের দিকে প্রতি বছর সেন্টমার্টিন পর্যটক আসতো মাত্র ১৫০-২০০ জন।
বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখের বেশি লোক এই দ্বীপে ভ্রমণ করে।পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষ এই দ্বীপে ঘুরতে আসে। সে কারণে সেন্টমার্টিনে বহু হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। ২০১২ সালে দ্বীপে মাত্র ১৭ টি হোটেল ছিলো। আর বর্তমানে হোটেল, মোটেল, ও কটেজের সংখ্যা প্রায় দেড়শ'র কাছাকাছি। এসব অবকাঠামো গড়ে তুলতে অবাধে চলছে বৃক্ষ নিধন। ৪০ বছর আগে দ্বীপে বৃক্ষ আচ্ছাধিত এলাকা ছিলো সাড়ে ৪ বর্গকিলোমিটার। আর বর্তমানে বৃক্ষ আচ্ছাধিত এলাকা ৩ বর্গকিলোমিটারেরও কম।
শুধু তাই নয়, সৈকত সংলগ্ন হোটেল, মোটেল রেস্তোঁরা দোকান নির্মাণের জন্য কেয়াবন ও প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। পর্যটকরা যে পরিমান বর্জ্য এই দ্বীপে ফেলে যায়, আা ফেলছে- তার অধিকাংশ সরাসরি সাগরে গিয়ে পড়ে। ফলে দ্বীপের আশেপাশের সাগর চরম মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে। সে কারণ কয়েক বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছিলেন, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ডুবে যেতে আর বেশিদিন সময় লাগবেনা।
কেন সেন্টমার্টিন নিয়ে এত মাতামাতি? এই প্রশ্নে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল বলেন, বাংলাদেশের অন্য শত দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন আলাদা গঠনের। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। যদি পরিবেশের ক্ষতি হয় তাহলে দ্বীপের প্রবাল গুলো মরতে শুরু করবে।
তখন দ্বীপ তার প্রাণ চাঞ্চল্য হারিয়ে ফেলবে। তখন দ্বীপের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। শত গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বীপের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। দ্বীপের উপর নতুন করে ভারী কোন কিছু আনা যাবে না। তবে কুছু ব্যবসায়ী কেউ তা মানছে না। সেন্টমার্টিন দ্বীপে দুই'শ মতো লোহা ও ইটের তৈরি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যার ওজন হাজার হাজার টন। এসব ইট ও লোহা সব বাহির থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দ্বীপটি হাজার হাজার টন লোহা ও কংক্রিটের বোঝা আর বহন করতে পারছেনা। এভাবে উপরে ওজন বাড়তে থাকলে সেন্টমার্টিন আস্তে আস্তে সাগরে বিলীন হয়ে যাবে।
আসুন আমরা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে টাকার বদলে একটু প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করি।
Editor and Publisher : Nityananda Sarkar,
News Editor- Arun Sarkar.