ক্রীড়া ডেস্ক //
আবারও আরেকবার হিমালয়ের চূড়ায় উঠলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে নিজেদের নাম লিখেছেন সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমারা। বুধবার রাতে সপ্তম নারী সাফের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে অবিস্মরণীয় শিরোপা জয়ের গৌরবে ভেসেছে বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলার বাঘিনীদের হয়ে গোল দুটি করেন দুই ‘চাকমা’ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা ও ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা। নেপালের হয়ে গোলটি করেন ফরোয়ার্ড আমিশা কার্কি।
এর আগে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আগের সাফের ফাইনালেও এই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার বাংলার মেয়েরা প্রথম জয়ের স্বাদ পায়। এবার একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখার দারুণ কীর্তি গড়েছেন বাংলার অদম্য মেয়েরা। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় চারদিক থেকে প্রশংসার বাণে সিক্ত হচ্ছেন সোনার মেয়েরা। বাংলার বাঘিনীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, ক্রীড়া উপদেষ্টা, বাফুফে সভাপতিসহ আরও অনেকে। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে প্রথমার্ধ গোলশূন্য সমতায় ছিল।
বিরতির পর ৫২ মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ এক আক্রমণে নেপালের রক্ষণব্যূহ ভেদ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। এই গোলে উজ্জ্বল হয় বাংলাদেশের শিরোপা ধরে রাখা। তবে বেশিক্ষণ গোলটি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫৫ মিনিটে সমতা ফেরায় নেপাল। প্রীতি রাইয়ের অসাধারণ এক থ্রু পাস ধরে লক্ষ্যভেদ করেন নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা কার্কি। ম্যাচের ৮১ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে ফের এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাঁপ্রান্ত থেকে অসাধারণ এক শটে নেপালি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেছেন ঋতুপর্ণা। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই শিরোপা ধরে রেখে মাঠ ছাড়েন বাংলার মেয়েরা।
ফাইনাল দেখতে স্থানীয় ফুটবল জনতা ভিড় জমান রঙ্গশালার গ্যালারিতে। ফাইনাল শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই কাঠমান্ডুর ১৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারি প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ‘নেপাল’, ‘নেপাল’ স্লোগানে তাঁরা মাতিয়ে রাখেন চারপাশ। অনেকের হাতে নেপালের পতাকা। স্টেডিয়ামে তৈরি হয় উৎসবের পরিবেশ। তবে স্বাগতিকদের উৎসবকে মাটি করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপার হাসি হেসেছে বাংলাদেশ।
২০২২ সালে প্রথমবার মেয়েদের সাফে শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েন বাংলার অদম্য মেয়েরা। এর ফলে পুরুষ কিংবা মেয়েদের ফুটবলে যে কোনো ফরম্যাটে ২০০৩ সালের পর সাফ শ্রেষ্ঠত্ব পায় বাংলাদেশ। পুরুষ দল সবশেষ ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০২২ সালে বাংলার সোনার মেয়েদের হাত ধরে ১৯ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজের দেশ। শুধু তাই নয়, ১৯৯৯ সালে নেপালেই প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল।
সুদীর্ঘ ২৩ বছর পর সেই নেপালেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরার মুকুট পরেন মেয়েরা। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও সাফের শিরোপা জয় করেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই সঙ্গে দেশের ফুটবলরকে তারা নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকার মানও সমুজ্জ্বল করেছেন বাংলার বাঘিনীরা।
২০২২ সালে সাফল্যের পর ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংবর্ধনা ও উৎসবমুখর আয়োজন ছিল মেয়েদের বরণ করে নেওয়া। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিজয়ী ক্রিকেট দল ও ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বিজয়ী দলকেও দেওয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। কিন্তু মেয়েদের সাফ জয়ের সংবর্ধনা ও উৎসব অতীতের যে কোনো কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংবর্ধনা ও সবচেয়ে বেশি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন সাবিনা-সানজিদা-মারিয়া-স্বপ্নারা। এবার আরেকবার সাবিনারা তেমন সংবর্ধনা পান কিনা সেটাই দেখার।
Editor and Publisher : Nityananda Sarkar,
News Editor- Arun Sarkar.