বিশেষ প্রতিনিধি //
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রার ভিসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তার সঙ্গে সম্ভাব্য সফরসঙ্গী অনেকেই ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এরপর ঠিক কবে নাগাদ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিমানে রওয়ানা করবেন, তা ঠিক হবে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে। সূত্র জানায়, অন্তত ১৫ জনের একটি টিম যাচ্ছে লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রার ভিসার কাজ শুরু হয়েছে। তার সম্ভাব্য সফরসঙ্গী হিসেবে পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য, ব্যক্তিগত সহকারী, নার্স এবং দলের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক বা একাধিক নেতা রয়েছেন।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার প্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং ওই দেশে ভিসা পাওয়ার জন্য সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডন যাত্রা করে চারটি মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরের বছর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুদকের মামলায় কারাগারে যান।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পরদিন (৬ আগস্ট) এভার কেয়ারে চিকিৎসাধীন থাকা বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
ভিসার প্রক্রিয়া শুরু হলেও খালেদা জিয়া কবে বিমানে চড়বেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ভিসার কাজ শেষ হওয়ার পর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি কবে যাবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, এখনো ডিসাইট হয়নি যাত্রার তারিখ। প্রসেসিং শুরু হয়েছে, দ্রুতই হয়তো জানা যাবে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে অতি দ্রুত ওনাকে বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অধ্যাপক জাহিদ উল্লেখ করেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় দেশটি আমেরিকা। তবে জার্মানিতেও এ ধরনের সুযোগ থাকায় লন্ডন থেকে সেখানেও যেতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
সর্বশেষ গত ৭ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ারে ভর্তি হন। এরপর ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসভবনে ফিরে আসেন। এর আগে ১৫৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি বাসায় ফেরেন তিনি।
২০১৮ সালে দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া হয়। ৭৮ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দফায় দফায় খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার জন্য চিঠি ও আহ্বান জানালেও তা মানেনি সাবেক সরকার। পরিবার থেকে সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হলেও অনুমতি মেলেনি।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করেন।