- ফেসবুক থেকে সংগ্রহ পোস্ট-
মোঃ আব্দুল্লাহ, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি //
সিলেটের জৈন্তাপুরে চোরাকারবারীদের হাতে এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে স্থানীয় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ওই সংবাদকর্মী জৈন্তাপুর মডেল থানায় এর প্রতিকার চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। যার জিডি নং-২৩৯।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জৈন্তাপুর সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে চোরাচালান পণ্যসহ নিষিদ্ধকৃত ভারতীয় গরু-মহিষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়ে আসছিলো চোরাকারবারীরা। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ৪৮ বিজিবি চোরাকারবারীদের আইনের আওতায় আনার শত চেষ্টা করলেও ব্যাটালিয়ান ১৯ বিজিবি দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। একই ভাবে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। জৈন্তাপুরে নবাগত ওসি যোগদানের পর নামেমাত্র দু-একটি অভিযান পরিচালনা করে দায়সাড়ছেন।
এদিকে বিগত ৬ নভেম্বর মোঃ সাজ উদ্দিন ওরফে সাজু নামের এক সাংবাদিক চোরাচালানিদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর প্রতিকার রোধে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পাশাপাশি জৈন্তাপুর অনলাইন নামের একটি ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্যাজে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের নাম সহ ভাইরাল করতে দেখা গেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় ”জৈন্তাপুরে গত রাতে চোরাকারবারিদের গডফাদার সামাদ, আরমান বাহিনী কর্তৃক গরু প্রবেশের সময় সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থানায় জিডি দায়ের। পরে উল্লেখ করা হয় আশা করি আমি বাদে সবাই উক্ত পোস্ট করলে টনক নড়বে। জৈন্তাপুর অনলাইন প্রেস ক্লাব কি জিনিস সেটা বুঝবে চোরাকারবারীরা। জিডির কপি সেক্রেটারি মহোদযের কাছে আছে। তবে দয়া জিডির কপি ফেসবুকে বা অন্য কোথাও না দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এসময় আরও উল্লেখ করা হয় আমার কোন কিছু হলে হয়ে যাক কিন্তু আমার কাছে আমার অনলাইন প্রেসক্লাব সর্বোচ্চ এবং আপনারা। আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে পারি ব্যক্তি হিসেবে খারাপ হয়ে যেতে পারি কিন্তু কোনদিনও আল্লাহ যেন আমার দ্বারা ক্লাবের কোন মানহানি না ঘটান। এটাই আমার কামনা।” কিন্তু রহস্যজনক হলেও সত্য যে আজও বিষয়টি ধরাশায়ী!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জৈন্তা রাজবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন থাকা ঘিলাতৈল টিপরাখলা ফুলবাড়ী এলাকা দিয়ে মদ, গাজা, হিরোইন, ফেন্সিডিল, অস্ত্র, কিট, শাড়ি, সুপারি, চিনি, জুতা, গরু-মহিষ সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী অবাধে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে শীর্ষ চোরাকারবারীরা। এসব পণ্য গৌরীশংকর বাগান এলাকা হয়ে রাজবাড়ী খেলার মাঠ দিয়ে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (মেডিক্যাল) গেট এর সম্মুখ হয়ে জৈন্তাপুর বাজারে এনে জড়ো করা হয়। পরে সেই পণ্যসামগ্রী অতি গোপনীয়তা রক্ষা করে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র কতিপয় অসাধু সদস্যকে হাত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহনযোগে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, রাজবাড়ী ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কতিপয় বিজিবি সদস্য গোপনে বড়ো অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিয়ে চোরাকারবারীদের এসব সূযোগ করে দিচ্ছেন। এই বড়ো অংকের চাঁদার ভাগবাটোয়ারায় অংশ নেন আরও বেশ কয়েকজন হলুদ চাঁদাবাজ সংবাদকর্মীরাও। শুধু তাই নয় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হাত থেকে রেহাই পেতে কৌশলে ১০-১২ জন চোরাইসদস্যদের কাছ থেকে কিছু মালামাল বা গরু-মহিষ সংগ্রহ করে জব্দ তালিকা দেখিয়ে সিজার লিষ্ট প্রস্তুত শেষে পুণরায় সেই চোরাইসদস্যদের হাতে নিলামপূর্বক সমজিয়ে থাকেন। এতে একসাথে “রথ দেখা ও কলা বেচা” হয়ে গেলো। সূত্রটি জানিয়েছে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে শুরু হয় চোরাই পণ্য আনার যজ্ঞানুষ্ঠান। প্রতিদিন রাতে একটানা চলে ভোর সাড়ে ৭টা পর্যন্ত্য।
সম্প্রতি বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকাল ৪ টার দিকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেইন পিলার নং ১২৮৬-১২৮৭ টিপরাখলা-ঘিলাতৈল (গৌরিশংকর) এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে খাসিয়ার গুলিতে ঘিলাতৈল গ্রামের আব্দুল মন্নানের ছেলে জমির আহমদ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হলেও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসনের। লাশের উপর দিয়ে চলছে রমরমা অবৈধ নিষিদ্ধকৃত এসব বাণিজ্য। আর মূলধারার সাংবাদিক নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হওয়া এটাতো তাদের নিত্য দিনের কার্যকলাপ। ওই এলাকায়ই সাজু সংবাদ সংগ্রহ ও বিডিও ধারণ করতে গিয়ে চোরাকারবারীদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে নিভৃত্বে কাদছেন। অথচ জিরো থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া শীর্ষ চোরাকারবারীরা হামলা-মামলা, নির্যাতন চালানোর পরেও অদৃশ্য কারনে থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় দোকান ব্যাবসায়ী প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, জৈন্তাপুর বাজার রাত ১১টা হওয়ার আগেই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা গেট সংলগ্ন এই বাজার অন্ধকারছন্ন থাকলেও কিছু লাইনম্যান দালাল ও চোরাই ব্যাবসায়ীর করতালে রাত পোহায়। তারা বলেন, জৈন্তাপুর থানা পুলিশের নাকের ডগায় প্রতিদিন এসব পণ্য গাড়ি লোড হয় কিন্তু আমরা হামলা-মামলা ও প্রাণের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছিনা। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই চোরাই ব্যবসায় অনেক তরুণ, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকেরা জড়িয়ে পড়ছেন। এসময় তারা দাবি করে বলেন, ১৯ বিজিবি’র উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর প্রতিকারে এগিয়ে আসলে চোরাই ব্যবসা বন্ধ করা মাত্র সময়ের ব্যাপার। তখন তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জব্দ হওয়া যেসব মালামাল নিলাম করা হয় সেগুলো আদালতের মাধ্যমে বিক্রয় হলে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। কারন তখন আর চোরাকারবারীরা নিলামের নামে কাউকে আতাত করতে পারবেনা।