• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কমলগঞ্জে আজ মনিপুরি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা

admin
প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, ২০২৪ ১৮:৩০:২২
কমলগঞ্জে আজ মনিপুরি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি //


সব ধরণের প্রস্তুতি শেষে আজ অনুষ্টিত হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহা মহারাসলীলা।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাকজমকপূর্ণ এ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) সিলেটের দেবজিৎ সিংহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অন্যান্য অতিথিরা।

জানা যায়, পূর্ণিমা তিথিকে সামনে রেখে এদিন কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুর এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে আয়োজন করা হয়েছে রাস উৎসবের। এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মন্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮২তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৩৯তম মহারাস উৎসব হবে এবার।

উৎসব উপলক্ষে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। শুক্রবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।

অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

এদিকে অনুষ্ঠান উপলক্ষে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগ থেকেই চলছে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে কয়েকটি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলে।
মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।
একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের ম‚ল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন কমলগঞ্জে।

কমলগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন দ্য ডেইলিমর্নিংসান’কে জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহলও থাকবে।