আন্তর্জাতিক ডেস্ক //
ইরান সরকার জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে এই আলোচনা কোনো চাপ ও ভীতি প্রদর্শনের অধীনে হবে না।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পারমাণবিক প্রধান মোহাম্মদ এসলামি এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সবসময় স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছি এবং আমরা তা এগিয়ে নেবো।
মোহাম্মদ এসলামি জানান, ইরান তার জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে এবং বাইরের চাপে কখনো নত হবে না।
ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, চাপ সৃষ্টি বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আলোচনা চালানোর চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে এই আলোচনা হবে সমঅধিকার এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। আমরা আলোচনা করতে ইচ্ছুক, তবে চাপ বা হুমকির মধ্য দিয়ে কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ হতে পারে। তবে এর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর তরফ থেকে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
ইরান মনে করে, তাদের পরমাণু প্রযুক্তি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য এবং তাদের উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এই কর্মসূচি ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ইরান যদিও বহুবার বলেছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধু বেসামরিক এবং শক্তি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আলোচনাটি সফল করতে হলে উভয় পক্ষেরই কিছুটা নমনীয়তার প্রয়োজন হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে এসলামি উল্লেখ করেছেন, ইরানের পারমাণবিক বিষয়ে কোনো রেজুলেশন হলে এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তারা বারবার দেখেছে যে ইরান কোনো চাপে প্রভাবিত হয় না এবং জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের এই সংস্থার সঙ্গে ইরানের মিথস্ক্রিয়া মূলত পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-র আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও এসলামি উল্লেখ করেন।
ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে আগামী সপ্তাহে IAEA-এর পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে একটি নতুন রেজুলেশন আনতে চায় বলে জানা গেছে।
এসলামি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন রেজুলেশন হলে তেহরান প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে।
‘যদি তারা সহযোগিতার পথে আসে, তবে ইরানও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা অন্য পথে গেলে, ইরানও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে,‘ তিনি যোগ করেন।
এদিকে IAEA মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি তার এই সফরকে বর্তমান জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ইরান ও IAEA-এর দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
গ্রোসি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সফরটি ফলপ্রসূ হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি