• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

‘ব্যাঙ রতন মনি’র লাগাম টেনে ধরতে পারছে না প্রশাসন!

admin
প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ১৭:৫৮:২৭
‘ব্যাঙ রতন মনি’র লাগাম টেনে ধরতে পারছে না প্রশাসন!

রতন মনি মোহন্ত, ছবি-সংগৃহীত।
সিলেট প্রতিনিধি //


সিলেটের জাল-জালিয়াতি চক্রের মুল হোতা রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙি মোহন্তের লাগাম টেনে ধরতে পারছেনা প্রশাসন। সময়ের ব্যবধানে আরও বেপরোয়া হয়ে উটছে এই মাফিয়া ডন। দেশের জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে তার নিত্যদিনের অপকর্ম প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য শক্তির কারনে থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাছোঁয়ার বাহিরে। অল্পদিনে অবৈধ পন্থায় গড়ে তোলা পাহাড়সম সম্পদের হিসাব ধামাচাপা পড়ে আছে। টনক নড়ছেনা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা শীর্ষে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। তার অপকর্মের রোষানলে পড়ে ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়েছেন ইসলামপুর মেজরটিলা নাথপাড়া গ্রামসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানের সহজ সরল অনেক ভুক্তভোগী পরিবার। বেশ কয়েকটি মোকাদ্দমায় তার জেল-জরিমানা হলেও বাস্তব রুপ ভিন্ন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধরাশায়ী তার এসব যজ্ঞানুষ্ঠান।

এদিকে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারী রিভিশন নং-১৬৬/২০১৯ইং এর আদেশ নং-৯; ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং-তারিখে রিভিশনকারী মহামায়া রানী নাথ এর পক্ষে আদালতের বিচারক একটি আদেশ দেন। যা রায় রদ করা হয় ৩০ এপ্রিল ২০১৯ খ্রি:। সেই আদেশ নামায় রতন মনি মোহন্ত সহ আরও ৫ জনকে পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩২৩ মোতাবেক দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
আরেকটি স্বত্ব মোকদ্দমা নং-৮১/২০১৯ইং। মামলাটির বাদী ছিলেন বাসন্তী বালা দেবনাথ। এই মোকদ্দমার রায় হয় ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩খ্রি: সহকারী জজ আদালত, কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট। সেই আদেশে উল্লেখ করা হয় নালিশা ১ম তপশীল বর্ণিত ভূমি সম্পর্কে বিগত ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ ইং তারিখে সিলেট সদর সাব রেজিস্টারীকৃত ১২৯৮০ নং-বিনিময় দলীল রতন মনি বরাবরে ওয়াজিবুর রহমান সম্পাদিত ৭ ডিসেম্বর ২০১০ ইং তারিখে ২১৪২৪ নং দলিল, ফয়জুল হোক গং-সম্পাদিত ৫ ডিসেম্বর ২০১০ ইং তারিখে ২১৩৫১ নং দলীল, আব্দুর রহমান গং সম্পাদিত ৬ ডিসেম্বর ২০১০ ইং তারিখে ২১৩৫৯ নং দলীল, ওয়াতির আলী গং সম্পাদিত ২০ ডিসেম্বর ২০১০ ইং তারিখের ২২২১১ নং দলীল এবং দলাই মিয়া সম্পাদিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ ইং তারিখের ১৫৭৬১ নং দলীল, বিবাদী ফয়জুল হোক গং কর্তৃক ৪৭ নং বিবাদী আবু আব্দুল্লাহ চৌধুরী বরাবরে সম্পাদিত ২০ মার্চ ২০০৮ ইং তারিখের ৪৭৭৭ নং দলীল বেয়াইনী, বাতিল ও অকার্যকর সাবস্থ করা হয়। পাশাপাশি বাদীপক্ষের শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে বাঁধা বিঘ্ন সৃষ্টি করা থেকে বিবাদীদের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন আদালত।
এছাড়াও মাননীয়, যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত, সিলেট, স্বত্ব মোকদ্দমা নং-২৬৬/২০১৩ ইং-আরেকটি মামলা করেন সাবেক কোতয়ালী মডেল থানা, বর্তমান এয়ারপোর্ট থানার ডলিয়া গ্রামের মৃত-রসময় চন্দ্র নাথ এর দুই ছেলে বীরেন্দ্র চন্দ্র নাথ ও কুলেন্দ্র চন্দ্র নাথ। সেই মামলায় রতন মনি মোহন্তকে প্রধান আসামী করে আরও ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান। বাদীপক্ষ মামলায় উল্লেখ করেন কবলাসমূহ জাল, পন্ড,বেআইনী, অকার্যকর, বেদাড়া ও প্রবৃত্তিবিহীণ। যার মোট ভূমির পরিমাণ ১২.৫০ একর। এভাবেই একের পর এক ভূমি জাল-জালিয়াতি করে অল্পদিনে গড়ে তুলছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি। রয়েছে বিলাস বহুল গাড়ি-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লোক দেখানো মন্দির। সে নিজেকে রক্ষা ও মোকদ্দমা দীর্ঘ করতে কৌশল অবলম্বন করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হতেও দ্বিধাবোধ করেনা।

অভিযোগ রয়েছে তার হাত থেকে রেহাই পায়নি দেবোত্তর সম্পত্তি সহ ভিপি সম্পত্তিও। আর এসকল কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন কথিত জীবন মজুমদার নামক এক জনৈক ব্যক্তি। তিনিও এখন জিরো থেকে কোটিপতি। এবিষয়ে জীবন মজুমদারের সহীত মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার সহায় সম্পত্তির হিসেব এলাকাবাসী দেখবে আর আপনার কিছু জানতে চাইলে সরাসরি আসেন কথা বলবো।

এর পূর্বে অল্পদিনে কোটিপতি স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর ভূমি খেকো গডফাদার রতন মনি মোহন্ত ও পর গৃহে আশ্রিত থেকে উত্থান হয় ‘ব্যাঙ রতন মনি’ মোহন্ত! শিরোনামে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও রহস্যজনক কারনে সেই অবৈধ সম্পদের হিসেব-নিকেশ নেওয়া হচ্ছে না।আজো রতন মনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যাংক ব্যালেন্স, সহায় সম্পত্তির সুষ্টু তদন্তের কোন ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে দেখা যায়নি। তবে একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে এসব সম্পত্তির বেশির ভাগ টাকা তিনি কৌশলে বিদেশ পাচার করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। যে কোন সময় তিনি চক্ষু আড়ালে গা ঢাকা দিতে পারেন। যদিও ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র একাংশ তদন্তে প্রায় কোটি টাকা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার আলামত বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু পুরো সম্পদের হিসেব এখনও ধামাচাপা পড়েই রয়েছে। শুধু তাই নয় তার নির্যাতন নিপীড়নের কবল থেকে সংবাদকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকও রেহাই পাচ্ছেনা। সমাজচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৮-১০টি পরিবার।