• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

গুলিতে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে টিটন ভুলতে পারছেন না জুলাই-আগস্টের সেই বিভীষিকাময় দিন

admin
প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর, শনিবার, ২০২৪ ১৯:৩৪:৩৮
গুলিতে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে টিটন ভুলতে পারছেন না জুলাই-আগস্টের সেই বিভীষিকাময় দিন

স্টাফ রির্পোটার, সিলেট থেকে //


জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতা গণআন্দোলনে স্বৈরশাসক আওয়ামী পুলিশ লীগের গুলিতে টিটনের শরীর ক্ষতবিক্ষত। তবু প্রাণ ভয়ে পিছপা হন নি সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক টিটন মল্লিক। সনাতন ধর্মে জন্মগ্রহণ করলেও আন্দোলনে ছিলেন সবার অগ্রভাগে। বিগত ১৯ জুলাই নেমে আসে তার জীবনের সেই কালো অধ্যায়। গুলির ভয়কে জয় করে রাজপথে সংগ্রাম চালালেও এখনো তার দেহ থেকে সেই গুলির চিরাচরিত চিহ্ন মুছে যায়নি। দেহে গেঁথে রয়েছে অসংখ্য গুলি। সেই গুলির সঞ্জনানি আওয়াজ এখনো থাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এর আগে তিনি দলের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা-সমাবেশে যোগ দিলেও জুলাই-আগস্ট মাসের বিভীষিকাময় দিনগুলো যেন ভুলতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট মহনগরীর টিলাগড় (গোপালটিলা) এলাকায় স্বপরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন টিটন মল্লিক। বিএনপি’কে ভালবেসে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী শাসনামলে জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ণ কোন কিছুই থাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ছাত্রজীবণ থেকেই তিনি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তার অপরাধ ছিল একটি বিএনপি দলের হয়ে রাজনীতি করা। সেই দলকে ভালবাসতে গিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।

আওয়ামী লীগ এর অমানবিক নির্যাতন, মামলা-মোকদ্দমা কেড়ে নিয়েছে তার তারুণ্যের জীবন-যৌবন। তিনি একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন তার পরিবারের সদস্যদের কাছে। হারিয়েছেন বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-বাণিজ্য। তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে নিজের সকল চাওয়া-পাওয়ার আকুতি। অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা গ্লানি তার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। ত্যাগ করতে হয়েছে নিজের সংসার জীবণ। হারিয়েছেন নিজের ভাই-বন্ধুবান্ধবদের। অবশেষে স্বজনহারা পথিক হয়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলার রাখাল রাজা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের কল্যাণে নিজের জীবনকে বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ছাত্র-জনতার গনআন্দোলনে। এসময় তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন সেই রাজপথ আন্দোলন থেকে হয়তো বা তার আর ঘরে ফিরে আসা হবেনা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গুলিবিদ্ধ হলেও এই যাত্রায় কোন এক অদৃশ্য কারণে বেঁচে যান তিনি। সুর্যোদয়ের নতুন দিনের সুচনা হয় তার।

এবিষয়ে জানতে টিটন মল্লিকের সাথে মুঠোয়ফোনে আলাপ করলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে দ্য ডেইলিমর্নিংসান’কে বলেন, আমি তো অনেক আগেই মারা গেছি। আওয়ামী দুঃশাসনের কবলে পড়ে আমি এখন নিঃস্ব। আমার অপরাধ আমি একজন জিয়ার সৈনিক। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি অধম মারা গেলেও কোন দুঃখ হতোনা, যদি নিরীহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা ‘না’ হতো। প্রশ্ন রেখে বলেন, ওরা ছাত্র, তারা নিষ্পাপ, তাদের বুকে কেনও গুলি চালানো হলো সেই ছাত্রদের অপরাধ কি ছিল? তিনি এসময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরশাসকমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে যারা গণআন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সকলের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে যেন এরকম আর কোন হত্যাযজ্ঞ আমাদের দেখতে না হয় ঈশ্বরের নিকঠ সেই প্রার্থণা করি।

নিয়মিত সংবাদ পড়ুন, মতামত জানান।