নয়ন, ছবি-সংগৃহীত।
সিলেট প্রতিনিধি, চিন্ময় নাথ //
রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে ব্যাঙ মোহন্তের অন্যতম সহচর ধীরেন্দ্র নাথ নয়ন এর উত্তান বিষয়ে। এখন সে জিরো থেকে কোটিপতি। সুনামগঞ্জ জেলার পলাশ জনতা বাজার এলাকার অজোপাড়া গায়ে বেড়ে ওঠা হতদরিদ্র নয়ন দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আগে সিলেট শহরে পাড়ি জমান। ছন্নছাড়া বাড়িঘর হীন নয়ন এর সঙ্গি ছিলেন তার পুরো স্ব-পরিবার।
সে তার জন্মদাতা পিতা আরাধন ও আরেক ভাই রিংকুকে সাথে নিয়ে সুদে টাকা এনে ইসলামপুর মেজরটিলা বাজারে সবজি বিক্রয় কাজ শুরু করে।
আরও দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই ওষুধ ফার্মেসির কর্মচারী ও অপর ভাই ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা সিএনজি চালক হিসেবে কাজে যোগ দেয়। এতেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি।
উল্টো নয়ন ধরা পড়ে যান সুদখোর গ্রুপের বেড়াজালে। যথা সময়ে সুদে আনা লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে প্রকাশ্যে বেঁধে রাখা হয় মেজরটিলা বাজারে। একপর্যায় সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে ঋণের চাপে আত্মহত্যা করতে গেলে স্থানীয়রা থাকে রক্ষা করে। এরমধ্যে আরেক ভাই সিএনজি ছিনতাই তকমা লাগিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরিশেষে তার দুই ভাই দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়।
এদিকে সবজি বিক্রয় বাদ দিয়ে দর্জি কাজে নেমে পড়ে নয়ন। এতেও কোন লাভ হয়নি। পরে যোগ দেন রতন মনি মোহন্তের সারদা পল্লীতে। সেখানে রতন মনি ওরফে ব্যাঙ মোহন্তের পরিবারের কাজের লোক হয়ে। ধীরে ধীরে ব্যাঙ মোহন্তের বিশ্বস্ত লোক হয়ে উটে নয়ন। কখনো ব্যাঙ’র পক্ষ নিয়ে হামলা-মামলার বাদি, কখনো স্বাক্ষি ছাড়াও জাল-জালিয়াতি কাগজের পাওয়ার অব এ্যাটর্নীর মালিক সেজে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। ব্যাঙ মোহন্তের ঘেরাকলে পড়ে শুরু হয় তার উত্তান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ছড়াতে থাকে তাদের মাফিয়া কার্যক্রমের নেটওয়ার্ক। সেটেলমেন্ট অফিসের এক শীর্ষ দালাল জিবলু মজুমদারকে বড় অংকের চাঁদা দিয়ে নামে বেনামে থাকা জাল-জালিয়াতি কাগজ দামাচাপা দিয়ে বিভিন্ন রেকর্ড ও জরিপ সেটেলমেন্ট এর ফর্সা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ।
এছাড়া যোগ দেন স্বৈরাচার শাসকদলীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী, সোনালী ব্যাংকের সরকারি কর্মকর্তা, সাব রেজিষ্টার, শিক্ষক, পুলিশ সদস্য, হুন্ডি ব্যবসায়ি ও প্রভাবশালী প্রবাসী সহ কতিপয় স্থানীয় এলাকার ভূমি খেকো চক্র। তাদের দখল থেকে রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, কবর স্থান, এনিমি প্রপার্টি, পাহাড় (টিলা), নদি-নালার জায়গা। এমন সত্যতা মিলেছে অনুসন্ধ্যানে। তাদের দলের তালিকাভুক্ত সকলেই এখন কোটিপতি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে তারা খোলস পাল্টিয়ে বিএনপি-জামায়াত পন্থি কতিপয় নেতাকর্মীদের ধরনা দিয়ে এসব কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আড়াল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সহ তারা দেশের বিভিন্ন যায়গায় গড়ে তোলেছে পাহাড় সম অঢেল সম্পত্তি।
সরেজমিন আরও জানা যায়, নয়ন ইতিমধ্যে ব্যাঙ মোহন্তের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে মেজরটিলা এলাকার দেবপুর মৌজায় বেশ কয়েক শতক নিজস্ব বাড়ির ভুমি হাতিয়ে নিয়েছেন। পাহাড় (টিলা) রকম ভুমিও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। পরিবেশ ধ্বংস করে টিলা কেটে ভুমি ক্রয়-বিক্রয় করে যাচ্ছেন। তাও অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নী বলে। দেবপুর মৌজার জে এল নং এস এ ৯৬, বি, এস ৮১ স্থিত, খতিয়ান নং-এস এ ৮৭১, নামজারী খতিয়ান নং-২৮০৩, বি, এস প্রিন্ট খতিয়ান নং-১৫৫৩, দাগ নং-এস, এ ১২৬২, বি, এস ৪২৭৭ নং-দাগে বিশ শতক ভুমি বিক্রয় করেছেন। তাও কোটি টাকা দামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, রায়নগর দর্জি পাড়া, সৌরভ আ/এ, ৫২ নং- বাসার মৃত-মোঃ রাহাত আলী চৌধুরীর ছেলে জমশেদ আলী চৌধুরী (প্রবাসী) উক্ত ভুমি কথিত কোটিপতি নয়নের নামে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দেন। পরে সেখানে প্রায় দেড়শ’ ফুট উচু টিলা কেটে সমতল বানিয়ে সেই ভুমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন পর্যন্ত টেনেছেন। সিসিক কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি প্লট বিক্রয়ের প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আরও একাধিক পাহাড় (টিলা) বিলীন করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে নয়ন। টিলার উপর দিয়ে বিদ্যু লাইন টানার কার্যক্রম ছেড়ে ফেলা হয়েছে। যাহা সম্পন্ন আইন নিষিদ্ধ। এতকিছুর পরেও এই রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে নয়ন যে কোন সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তিনি ইতিমধ্যে ভারতের সদস্য কার্ড নিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন সুষ্ট তদন্ত হলে এদের প্রায় ৩শ’ বিঘার মতো ভুমি আত্মসাৎ, জালিয়াতি, এনিমি প্রপার্টি, কবর স্থান, মসজিদ-মন্দিরের জায়গা দখলসহ কোটি কোটি টাকা সরকারি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি খোলা ময়দানে বেরিয়ে আসবে।
সবসময় সংবাদের সাথে যুক্ত থাকুন।