ফাইল ছবি।
স্টাফ রির্পোটার, সিলেট //
কাজ সম্পন্ন করেও কোন বিল পাচ্ছেন না সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ঠিকাদাররা। বারবার ধরনা দিয়েও কাজের জন্য জামানত রাখা অথর্ও ফেরত পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়েই চলমান কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ঠিকাদাররা। ১৬ জানুয়ারি বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া এক আবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
তাই নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে সিসিকের নাগরিকদের মধ্যে।
গত বর্ষা মৌসুমের অতিবৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সড়কের এখনো মেরামত হয়নি। তাছাড়া চলমান অনেক কাজও শেষ না হওয়ায় নাগরিকরা ভোগছেন নানা সমস্যায়। এবস্থায় ঠিকাদাররা সময়মত টাকা পেলে চলমান কাজ বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন নাগরিকরা।
কাজ সম্পন্ন করার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন বিলের টাকা না পাওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি সিসিকের প্রশাসক, প্রধান উপদেষ্ঠা, প্রধান উপদেষ্ঠার মূখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, নগরীর প্রায় এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান রয়েছে।
আগস্টে সরকার পতন হলে বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সিসিকের ঠিকাদার এসোসিয়েশন সকল কার্যক্রম চলমান রাখে। কিন্তু মেয়রের পরিবর্তে গত ৫ মাস ধরে প্রশাসক কর্র্তৃক সিসিক পরিচালিত হলেও এখন পর্যন্ত ৫ আগস্টের পূর্বে সম্পন্নকৃত সকল কাজের এবং চলমান সম্পন্ন কাজের কোন বিল দেওয়া হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সিসিকের প্রকৌশল বিভাগ স্থান পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরও কোন বিল দেওয়া হচ্ছেনা। উল্টো স্থান পরিদর্শন করে বিল দেওয়া হবে বলে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে। এ কারনে বিল না পাওয়ায় ঠিকাদাররা পড়েছেন আর্থীক সংকটে। একদিকে চলমান কাজের মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের চাপ, কর্মরত শ্রমিকদের মজুরী, ব্যাংক থেকে উত্তোলিত ঋণের কিস্থি পরিশোধের চাপ। সবকিছু মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদাররা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সভাপতি মাসুম ইফতেখার রসুল শিহাব দ্য ডেইলিমর্নিংসান’কে বলেন, গত ৫ আগস্টে পূর্বে সম্পন্ন হওয়া কাজের লিখিত ও স্কাক্ষরিত বিলের টাকাও এখন পাইনি। ঠিকাদারী ব্যবসার সাথে জড়িতরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে থাকেন। সময় মত বিলের টাকা না পাওয়ায় একদিকে ব্যাংকের সুদ বাড়ছে। অপরদিকে সিআইবি রিপোর্ট ও খারাপ হচ্ছে। সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হলে ভবিষ্যতে ব্যাংক ও আমাদের কোন ঋণ দেবে না। তাই বিলের টাকা না পেলে চলমান সকল কার্যক্রম বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হবে। যার ফলে জনদূর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারকে অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশাসক নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর সিসিকের জন্য সময় বের করেন। জনপ্রতিনিধি যেভাবে সময় ম্যানেজ করতে পারেন প্রশাসকের পক্ষে সেভাবে সময় বের করা সম্ভব হচ্ছেনা। পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় সকল কাজ পরিদর্শন শেষ করা সম্ভব হচ্ছেনা। যে কোন বিলের অনুমোদনের জন্য প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টরা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তার পর বিল অনুমোদন করা হয়। যদিও এসোসিয়েশনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, সম্পন্নকৃত কাজ পূর্বে প্রকৌশল বিভাগের সমন্বয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এনায়েত আহমেদ রনি বলেন, আমরা আমাদের প্রাপ্ত বিলের বিষয়ে প্রশাসক সহ প্রধান উপদেষ্ঠা বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছি। এখন যদি বিলের টাকা পরিশোধ করা না হয়। তাহলে কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া আমাদের আর কোন পথ খোলা নেই। সবস্থানে কাজ বন্ধ রাখলেও একমাত্র আমরা সিলেটের বাসিন্ধাদের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে নগরীতে কোন কাজ বন্ধ রাখিনি। কিন্তু কাজ সম্পন্ন করার পরও বিল পরিশোধ না করাটা আমাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ঠিকাদার এসোসিয়েশনের আবেদনের কপি এখনো পাইনি। তবে তাদের বিলের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। যাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে আমরা দ্রুত তাদের বিল পাওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেব। কাজের গুনগত মান ঠিক থাকলে আর জামানতের মেয়াদ শেষ হলে যার যার জামানত ফেরত দেওয়া হবে।
আপনাদের যে কোন মতামত আমরা সাদরে গ্রহণ করব।