• ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

দুদক কর্তার সহযোগিতায় রতন মনির দুর্নীতির তদন্তে ভাটা পড়ে!

admin
প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার, ২০২৫ ০৫:০৮:৫৫
দুদক কর্তার সহযোগিতায় রতন মনির দুর্নীতির তদন্তে ভাটা পড়ে!

ছবি-সংগৃহীত।
সিলেট প্রতিনিধি, চিন্ময় নাথ //

সময়ের ব্যবধানে রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙ জালিয়াত মহন্তের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। গণমাধ্যমে এসব তথ্য প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারনে প্রশাসন বা দুদকের পক্ষ থেকে কোন দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এতে বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ ছত্রছায়ায় গড়ে তোলা পাহাড় সম অবৈধ অঢেল সম্পত্তির হিসাব ধামাচাপার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধ্যানকালে জানা গেছে, আওয়ামী শাসনামলে তার বিরুদ্ধে দুদক তদন্তে নামলে সে সরকার দলের লোক হওয়াতে কতিপয় কথিত কিছু অসাধু আওয়ামী দোসর দুদক কর্মকর্তাকে হাত করে নামে মাত্র জমির শ্রেণী পরিবর্তনে প্রায় কোটি টাকার উর্ধ্বে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেখিয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন সময়ে রতন মনি সিলেট দুদক অফিসের এক কর্মকর্তাকে সিলেট মহানগরীতে বেশ কয়েক শতক জমি দান করার দৌড়ঝাঁপ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রটি প্রতিবেদক’কে নিশ্চিত করে ওই দুদক কর্মকর্তাকে প্রথমে ইসলামপুর মেজরটিলা ফাল্গুনি এলাকার বিরিন্দার টিলা (পাহাড়) রকম জমি দেখানো হলে সেই অসাধু কর্মকর্তা টিলা ভূমি নিতে অনিহা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে থাকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহপরাণ মাজার এলাকায়।

অভিযোগ রয়েছে ওই অসাধু দুদক কর্তার সহযোগিতায় তার বিরুদ্ধে ছোট পরিসরে মামলা নিয়ে অঢেল সম্পত্তির হিসেব ধামাচাপা দেন ব্যাঙ মোহন্ত। এতে দুদক তদন্তে ভাটা পড়ে।

সূত্রটি আরো জানায়, ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জমি হস্তান্তরের সময় বেশির ভাগ বায়না পত্রে সে নিজে স্বাক্ষি, সনাক্তকারী ও মালিক সেজে টিপসই দস্তগত দিয়ে থাকে। এসময় তাকে সঙ্গ দেন আরও ৩-৪ জন ভূমিদস্যু।

এদিকে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মেজরটিলা এলাকার দেবপুর মৌজায় প্রয়াত ব্যারিস্টার আনাউল কাদের চৌধুরী রউফ এর বিপুল সম্পত্তি তার দখলে নিয়ে রেখেছে। রউফ মৃত্যুকালে ৪ স্ত্রী সহ সন্তানাদি রেখে গেছেন। এর মধ্যে এক স্ত্রী নিঃসন্তান। দুই স্ত্রী প্রবাসে বসবাস করছেন। আরেক স্ত্রী অন্যের গৃহীনি হয়ে সুখের সংসার সাজিয়েছেন। অথচ সেই জমির উপর চোখ পড়ে ‌‍”শকুন” রতনের।

সূত্রটি নিশ্চিত করে, জীবদ্দশায় ব্যারিস্টার রউফ এমনকি তার অবর্তমানে কোন উত্তরাধিকারী এই বিপুল সম্পদ বিক্রয় করেন নি। উল্টো তার উত্তরাধিকারীদের রাখা হয়েছে হুমকির মুখে। তাদের জায়গার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে হাউজিং আবাসন প্রকল্প।

অপরদিকে উত্তরা আবাসিক এলাকার মুড়িলায়ও একাধিক প্লট হস্তান্তর করেছে মহন্ত। তাও বায়না দলিল মুলে সেই যায়গা বিক্রয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মুড়িলা এলাকার একাধিক যুবক প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন রেজিষ্ট্রি ছাড়াই এসব জমি সমজিয়ে দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা কড়ি।

উল্লেখ্য যে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ইসলামপুরের নাথ পাড়ার “রজনী নিবাস” ২৩৩/ই উত্তরা আবাসিক এলাকার রসময় মোহন্তের ছেলে রতন মনি মোহন্ত বসবাস করছেন।

স্হানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, রতন মনি পরগৃহে আশ্রিত থেকে বড়ো হোন। পরে বনেযান তথাকথিত সামান্য একজন মুহুরী (মরিল)। সেখান থেকেই জাল জালিয়াতের মাধ্যমে আজ তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক।

সিলেট জুড়ে রয়েছে তার বে-হিসাব সম্পত্তি। গড়েছেন টাকার পাহাড়। নামে বে-নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে তার একাউন্ট। চলনে তার রাজকীয় ভাব। ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী লালন পালন করে নিজেকে পরিচয় দেন নাথ পাড়ার বাদশা হিসেবে।

ভুমি জালিয়াতির জন্য রতন মনি মোহন্ত নিজের পেশা ও ভুমি জরিপ অফিসের দুর্নীতিগ্রস্হ কর্তাদের কাজে লাগিয়ে রাতারাতি সিলেটের ভূমির মালিকদের কাছে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠেন।

সুত্র বলছে, ভূমি জরিপকালে তিনি ছিলেন আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন লোকজনের জায়গা, বিশেষ করে দেবপুর মৌজার একজনের জায়গা আরেকজনের নাম করে কামিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। কেউ ভুমি ক্রয়-বিক্রয় করতে গেলেও তার দ্বারস্থ হতে হয়।

এরপরের ইতিহাস সিলেটবাসীর জানা। অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের গৌরবে রতন মনির চালচলনও পাল্টে যায়। এলাকায় হয়ে উঠেন কথিত মন্দিরের সেবক। চালান হিন্দুদের উপর নির্যাতন। হাতিয়ে নেন নাথ পাড়ার অধিকাংশ জায়গা জমি। সেই সাথে টিলা পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলেন তিনি।

ক’বছর আগে বিতর্ক এড়াতে এই ভূমিদুস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতীর সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেন। এরপরও তাকে ঘিরে আলোচনা শেষ হয়নি। বরং দিন দিন ডালপালা মেলা শুরু করে যার জন্য এখনো তার ওপর সংক্ষুব্ধ মানুষ। এখন বসন্তের কোকিল হয়ে বিএনপি-জামায়াতের ছায়া তলে থাকার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সম্প্রতি তার উপর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে হয়েছে মামলা রয়েছে বিচারাধীন।

সিলেটে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এ ভূমিদুস্যের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতির ঘটনায় অনেক মামলা রয়েছে।

ভূমি অফিসের নাম প্রাকশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী সরকার আমলে রতন মনির দাপটে সবাই তটস্থ থাকতেন। এমনকি সেটেলমেন্ট অফিসাররাও তাকে সমীহ করতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অফিসের সবাই তাকে ভয় পেত।

বিভিন্ন সুত্র ও গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ভূমি রেকর্ড বিভাগে এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। টাকা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করাই ছিল তার একমাত্র নেশা।

নিরীহ ভূমির মালিকদের ভূমির রেকর্ড অবৈধ পন্থায় পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ দুর্নীতিবাজ রতন মনি মোহন্ত।

প্রাননাশের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাথ পাড়ার কয়েকজন জানান, গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে রতন মনি মোহন্ত খোলস পাল্টাতে থাকে।

প্রথমে সে স্হানীয় কিছু অস্ত্রধারি সন্ত্রাসীদের টাকার বিনিময়ে তার বাড়িতে পাহারা বসায় যাতে কেউ হামলা করতে না পারে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের গুঠি কয়েক দালাল বিএনপি-জামায়াতের নাম বিক্রি করে রতন মনিকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিতে শুরু করে। এতে সে বিরাট অংকের টাকাও ব্যয় করে।

সংবাদ পড়ুন, মতামত পেশ করুন।