ঢাকা //
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া ব্যবস্থাগুলো সংস্কার করতে সরকারের প্রধান বাধা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা সংস্কার বিষয়ে সরকারকে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। তাদের চাওয়া শুধু নির্বাচন।
তাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী মামলা বানিজ্য হওয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শহিদ পরিবার।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে অটোবি সেন্টারের সেলিব্রিটি কনভেনশন হলে আয়োজিত থানা প্রতিনিধি সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে থানা প্রতিনিধি সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন, লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন প্রমুখ।
লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের দেশে বহু ধরনের রাজনৈতিক দল রয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বড় বড় রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়েছে। ’২৪ সালের যারা সুসংগঠিত আন্দোলন করছে, তারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় তাহলে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, দেশ যদি রাজনীতির ভিত্তিতে চলে তাহলে রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল ছাড়া চলে না। অথচ তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, তরুণরা যদি দল করে তাহলে আমাদের কী হবে? সত্যিকার অর্থে আমাদের রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। তারা ক্ষমতাসীন দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। শুধু দেশ নয়, বিদেশি সংস্থাগুলোও ব্যর্থ হয়েছিল। দেশের জনগণ ঐকবদ্ধ হলে কী করতে পারে তা আন্দোলনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষ যেনো নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। জণগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করতে হবে, শোষণ নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷সব ধরনের হত্যা, গুম, খুন বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলো বৃদ্ধির কারণে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেনো ঘোষণাপত্র হবে না? অবশ্যই ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত সংগঠনের নেতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
এক প্রশ্নের জবাবে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শেখ হাসিনা ও তার দোসররা নষ্ট করে দিয়েছে। এই সেক্টরে প্রয়োজন সংস্কার। যদি সংস্কার না করা হয় তাহলে আগামীতে আরও খারাপের দিকে যাবে। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংস্কার করতে উপদেষ্টারা ভয় পাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার না করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারকে প্রেসারে রাখছে। তারা বিভিন্ন কাজে বাধা দিচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রপতির অপসারণ করতে হবে। সংবিধান বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বাধা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত এ জায়গা থেকে সরে আসবে৷
নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগেই বিএনপিসহ অনেক দল জাতীয় নাগরিক কমিটিকে বিরোধী দল মনে করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের বিরোধী দল মনে করছি না। আমরা নিজেদের কাজ করে যাচ্ছি। আগামী মাসেই নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে। এরপরই বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারণ করবে কারা ক্ষমতায় আসবে।
আখতার হোসেন বলেন, এতো সময় পার হয়েছে কিন্তু আমরা শহিদদের নির্দিষ্ট সংখ্যার তালিকা পাইনি৷ সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করেছি যেনো সঠিক সংখ্যা দ্রুত প্রকাশ করা হয়। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয় এবং তাদের পুনর্বাসন করা হয়। আশা করি সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ১৪, ১৮ ও ২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের ভোট দিতে পারে নাই। ওই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ তাদের ভোট রাতেই দিয়ে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগকে এখন অনেকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামীতে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ ভোটে অংশগ্রহণ করতে দেবে না।
আখতার হোসেন বলেন, পাঁচ আগস্টে পর থেকে বাংলাদেশে মামলা বানিজ্য শুরু হয়েছে। এ মামলাবানিজ্যের মাধ্যমে শহিদ পরিবারগুলো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। তাই এ মামলাবানিজ্য বন্ধ করতে হবে৷৷
সামান্তা শারমিন বলেন, মানুষের অধিকার নষ্ট করেছে আওয়ামী লীগ। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। এই আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।
নিয়মিত সংবাদের সাথে যুক্ত থাকুন।