• ২৪শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ফিনল্যান্ড সীমান্তজুড়ে রাশিয়া গড়ে তুলছে নতুন ঘাঁটি

admin
প্রকাশিত ২৫ মে, রবিবার, ২০২৫ ০০:১৯:১৫
ফিনল্যান্ড সীমান্তজুড়ে রাশিয়া গড়ে তুলছে নতুন ঘাঁটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক //


ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও চলছে। এরই মধ্যে আরেক নতুন রণাঙ্গনের ‘কুচকাওয়াজ’ শুরু হয়ে গেছে রাশিয়ায়। এবারের প্রতিপক্ষ পুবের প্রতিবেশী ন্যাটোর নতুন বন্ধু ফিনল্যান্ড। দুই দেশের মাঝে প্রায় ১,৩৪০ কিলোমিটার সীমানা।

দীর্ঘ এ সীমান্তজুড়ে রাশিয়া চুপিসারে গড়ে তুলছে নতুন ঘাঁটি। মোতায়েন করছে সেনা। আধুনিকায়ন শুরু করেছে সামরিক অবকাঠামোগুলোতেও।

একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে প্রস্তুতি, অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের সাম্প্রতিক ন্যাটো অন্তর্ভুক্তি-সবকিছু মিলিয়ে রাশিয়া আগামীর সংঘর্ষের মানচিত্র আঁকছে ইউরোপের উত্তরের এ সীমান্তেই।

রাশিয়ার এ গোপন রণপ্রস্তুতিতে যুদ্ধাতংক ছড়িয়ে পড়েছে বাল্টিক প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়াতেও। এএফপি, গার্ডিয়ান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যদি থেমেও যায়, রাশিয়ার বাহিনী তখন এই সীমান্তে আরও বড় আকারে মোতায়েন হতে পারে। আর সেটাই হতে পারে এক নতুন সংঘর্ষের সূচনা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ন্যাটোতে যোগ দেয় ফিনল্যান্ড। এরপর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ এবং বিমানঘাঁটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে রাশিয়া।

ক্রেমলিন মনে করে, ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান তাদের ঐতিহ্যবাহী কৌশলগত ভারসাম্যকে বিপন্ন করেছে। ফলে, এই নতুন জোটসীমান্তকে প্রতিরক্ষা ও সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্র হিসাবে গুরুত্ব দিচ্ছে মস্কো।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফিনল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরের কামেনকা অঞ্চলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৩০টির বেশি সেনা তাঁবু স্থাপন করেছে। যা প্রায় ২,০০০ সেনার আবাসন সক্ষমতার জন্য যথেষ্ট।

শুধু ফিনল্যান্ডেই নয়, ন্যাটো মোকাবিলায় নরওয়ে ও ব্লাল্টিক সীমান্তেও সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে রাশিয়া। ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরের পেত্রোজাভদস্ক শহরের আশপাশে সামরিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ করছে।

নতুন করে তৈরি করেছে তিনটি বিশাল গুদাম। প্রতিটিতে প্রায় ৫০টি করে সাঁজোয়া যান সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি হতে পারে ন্যাটোর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে মস্কোর নতুন সদর দফতর।

এছাড়া সোভিয়েত আমলের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি-সভারোমোর্স্ক-২ এবং ওলেনিয়া পুনরায় সক্রিয় করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মস্কো। তবে ন্যাটোর আশঙ্কা, মস্কো শুধু নিরাপত্তার জন্য নয় বরং আর্কটিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটের ওপর প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশেই সেখানে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে দেশটি।

ফিনিশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার এই উদ্যোগ ছোট পরিসরে হলেও এটি হাজার হাজার সেনা এবং যুদ্ধসরঞ্জাম মোতায়েনের বিশেষ প্রস্তুতি হতে পারে। তাদের ধারণা, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া এই অঞ্চলগুলোতে বড় ধরনের বাহিনী ফিরিয়ে আনতে পারে।

ফিনিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্ট্র্যাটেজি প্রধান বলেছেন, আমরা জানতাম, ন্যাটোতে যোগ দিলে এরকম কিছুই ঘটবে। আমরা সব কিছুর জন্য প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা ফিনল্যান্ডের প্রতি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হুমকি দেখতে পাচ্ছি না। তবে রাশিয়ার গতিবিধি প্রতিদিন নজরদারির আওতায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘রাশিয়ার পদক্ষেপে আমি মোটেও চিন্তিত নই। ফিনল্যান্ড ও নরওয়ে খুব নিরাপদেই থাকবে।’

এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে ডেনিশ গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে অচলাবস্থা এলে ৫ বছরের মধ্যে ইউরোপে বড় আকারের স্থলযুদ্ধ শুরু হতে পারে।

অনেকেই বলেছেন, মস্কো প্রস্তুত হতে সময় নেবে মাত্র ২ বছর। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই ইউরোপকে আত্মরক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

মতামত জানান।