• ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২২

admin
প্রকাশিত ২২ জুলাই, মঙ্গলবার, ২০২৫ ০৩:০৮:৩১
বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২২

বিশেষ প্রতিবেদক //


শিক্ষার্থীদের কেউ ক্লাস করছিল, কেউ ছুটি শেষে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকেরা। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অন্য দিনের মতো গতকাল সোমবার দুপুরেও ছিল এমন চেনা ব্যস্ততা। বেলা একটার পর হঠাৎ শোনা গেল বিকট শব্দ। মুহূর্তেই আগুন, ধোঁয়া আর চিৎকারে এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু।

পরে জানা যায়, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা–বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মর্মান্তিক এ ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭১ জন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্কুল ছুটির সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আবার ক্লাস শেষে কারও কারও কোচিং চলছিল। যে ভবনে বিমানটি আছড়ে পড়ে, সেটির পাশে ছিল শিশুদের খেলার দোলনা। কেউ কেউ তখন দোলনায় ছিল। এ জন্য হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু।

ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী মোট ১৬ জন প্রতিবেদক ও ফটোসাংবাদিক ছিলেন, তাঁরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আরও ছিলেন মাল্টিমিডিয়া বিভাগের পাঁচজন।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবীরা। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান অনেকে। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমান থেকে বের হওয়া ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও বেঁচে নেই।

হতাহতদের উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। অন্তত আটটি হাসপাতালে হতাহতদের নেওয়ার খবর জানা গেছে। পরে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে যান হতাহতদের স্বজনেরা। স্বজনদের আর্তনাদ–আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালগুলো।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশির ভাগই দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তা ছাড়া নিহতদের মধ্যে অনেকের শরীর এমনভাবে ঝলসে গেছে যে তাঁদের চেহারাও চেনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাঁদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাঁদের মৃতদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

হতাহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে।

কীভাবে বিধ্বস্ত হলো যুদ্ধবিমান

উত্তরায় ভয়াবহ এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে আইএসপিআর। তারা বলছে, এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে উড্ডয়ন করেছিল। এরপর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়।

আইএসপিআর জানায়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, বিমানটি প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মাঠে আছড়ে পড়ে। পরে এটি প্রায় ৩০ গজ গর্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। পরে দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় গিয়ে আঘাত করে। বিমানের সামনের অংশ নিচতলার একটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে যায়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিধ্বস্ত হওয়ার পরপর বিমানটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ওই সময়ই আগুন ধরে যায়। তখন সিঁড়ি বেয়ে ভবনটির ফটক দিয়ে যাঁরা বের হচ্ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগ হতাহত হন।

নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি গতকাল প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়েছেন।

যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় এই বৈমানিক কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, তা জানতে কথা হয় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই পাইলট বিমান থেকে বের হয়ে যান। এ ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, তিনি বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখতে পেয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, বিমানবাহিনীর একই ধরনের বিমান এর আগেও বিধ্বস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।

গতকালের দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনে বিমানবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

কেন এত হতাহত

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিমানটি স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হওয়ায় এবং ঘটনাটি ছুটির সময়ে ঘটায় হতাহত বেড়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিম হাসান সিয়াম বলে, ভবনটির নাম প্রজেক্ট-২। ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি শ্রেণিকক্ষ আছে। আর ৪টি শিক্ষকদের কক্ষ। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হতো এই ভবনে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কক্ষের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছে, ভবনটিতে ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।

বিধ্বস্ত হওয়ার সময়ের একটি বর্ণনা দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুদ্ধবিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুল ভবনে ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং’ করেছে। এই দোতলা ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের সভাকক্ষ।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ওই সময় একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। তখন স্কুলও ছুটি হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিল। তাদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও ছিলেন।

ঘটনার সময় ওই ভবনে কত শিক্ষার্থী ছিল, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে ২৫–৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন বলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির বর্ণনায় উঠে এসেছে।

স্কুলটির শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাশ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, স্কুল ছুটি হয় বেলা একটায়। এরপর দুই ঘণ্টা কোচিংয়ের জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিল। যাদের অভিভাবক তখনো নিতে আসেননি, এমন শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছিল। এমন সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

ঘটনার সময় ৮০ ভাগ বাচ্চা বাড়ি চলে গেছে জানিয়ে পূর্ণিমা দাশ বলেন, ‘আমি কিছু বোঝার আগে দেখি, ছোট বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসছে। দেখলাম, তাদের সারা গায়ে আগুন। আমি কোনোরকমে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ঢালছি দু–তিনজনের গায়ে।’

হতাহতরা ৮ হাসপাতালে

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আইএসপিআর জানায়, হতাহতদের রাজধানীর আটটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন রাত সাড়ে ১০টার দিকে এবং অন্যজন রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান।

আহতদের মধ্যে প্রাথমিক মূল্যায়নে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে ১৭টি শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।

নিহতদের বেশির ভাগের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মুনতাহা তোয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে জানান, বিমানটি আছড়ে পড়ার ৫-৭ মিনিট পর তিনি ঘটনাস্থলে গেছেন। তখন ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে আসেনি। তবে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। সেনাবাহিনীকে টপকে এগিয়ে যান তিনি। গিয়ে দেখেন, ১০-১৫ জন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে। সবগুলো ক্ষতবিক্ষত।

হতাহতদের খোঁজে গতকাল রাত পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে স্বজনদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। তবে কতজন এখনো নিখোঁজ আছেন, সেই সংখ্যা জানা যায়নি।

আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, ঢাকা মেডিকেলে ৩ জন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৭ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজনকে নেওয়া হয়েছে। তবে পরে অনেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল পরিবর্তন করেছেন বলে জানা গেছে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবে সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও সব বেসরকারি হাসপাতালকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে চ্যালেঞ্জ

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাস্থল মাইলস্টোন কলেজের কাছেই মেট্রোরেলের সর্বশেষ (উত্তরা উত্তর) স্টেশন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে স্টেশনটিতে নেমে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির দিকে যাওয়ার পথের সড়কে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেবল উদ্ধারকারী যানবাহন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছিল। কিছুটা পথ হেঁটে সামনে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন।

পরে মাইলস্টোন কলেজের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। কেবল শিক্ষার্থীদের স্বজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হচ্ছিল। তবে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আবার স্বেচ্ছাসেবক ও ঘটনাস্থলে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য পানি ও শুকনো খাবার নিয়ে আসতেও দেখা যায়। এ সময় কেউ কেউ আবার বিভিন্ন গ্রুপের রক্তদাতা খুঁজছিলেন।

এর মধ্যেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, রাত সাড়ে আটটায় উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। তবে বিমানবাহিনী বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ সরানো পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে মোতায়েন ছিল। এরপর রাত ৯টা ১০ মিনিটে তারাও ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার স্টেশনে ফিরে যায়।

মতামত জানান।