ম্যাপ, ছবি-সংগৃহীত।
বিশেষ প্রতিবেদক //
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছয়জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে আদালত নির্দেশ দিলেও মাসখানিক সময় পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারনে আজো পর্যন্ত লাশ উত্তোলন করা হয়নি। অথচ একমাস পূর্বে লাশ উত্তোলন করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এর আগে গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনের লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৪), দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয় (২০), শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪০), দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩) এবং ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন (৩৫)।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথকভাবে ছয়টি ও আদালতে একটি মামলা করা হয়। সব কটি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়।
গোলাপগঞ্জ থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিহত ছয়জনের কারও লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ তোলার আদেশ দেন আদালত।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর গত সপ্তাহে চারটি লাশ কবর থেকে তোলার জন্য চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের লাশ তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জনি রায়, নাজমুল ইসলামের লাশ উত্তোলনের দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জর্জ মিত্র চাকমা, হাসান আহমদের লাশ তোলার দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও সানি আহমদের লাশ উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানাকে।
গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, লাশ উত্তোলনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা থানায় পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব দিয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে নিহত ব্যক্তিদের লাশ উত্তোলন করা হবে। তাঁরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, এখন পর্যন্ত লাশ উত্তোলনের নির্দিষ্ট দিন–তারিখ ঠিক হয়নি। পুলিশের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যোগাযোগ করে লাশ উত্তোলনের তারিখ ঠিক করে নেবেন।
এদিকে ছয়জনের মধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের লাশ উত্তোলন না করতে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মো. রেজাউল করিম। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানার আদালতে তিনি আবেদন করেন। শুনানিতে বিচারক আবেদনের নথি সংরক্ষণ করার কথা বললেও কোনো আদেশ দেননি। এ জন্য লাশ উত্তোলনের আদেশ বহাল থাকছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হান্নান বলেন, ‘মামলার বাদী লাশ উত্তোলন না করতে আদালতে আবেদন দিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আগের নির্দেশনা বহাল আছে।’ লাশ উত্তোলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে তারিখ ঠিক করার কথা জানান তিনি।