• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দ্বিতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০১ রানে

admin
প্রকাশিত ২২ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০২৪ ১৮:২১:৩২
দ্বিতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০১ রানে

ক্রীড়া প্রতিবেদক //


দিনের বাকি আর কয়েকটি বল। সেগুলো সামলাতে পারলে রাতটাও নিশ্চিন্তে পার করে দেওয়া যায়। কিন্তু পড়ন্ত বেলায় মাহমুদুল হাসানের মাথায় ঠিক কী কারণে এত তাড়াহুড়োর চিন্তা এল, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ২৮তম ওভার করতে এলেন ডেন পিট। তাঁর প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গেলেন। ব্যাট-বলে সংযোগ তো হলোই না, উল্টো পড়ে গেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার কাইল ভেরেইনা বেল দুটি ফেলে দেওয়ার আগমুহূর্তে মাহমুদুল ব্যাটটা ক্রিজে রাখতে না পারলে আরও বড় বিপদ হতে পারত বাংলাদেশের।

অবশ্য এর আগে সাদমান ইসলাম ও মুমিমুল হকের দ্রুত ফিরে যাওয়া কিংবা নাজমুল হোসেনের আরেকবার বড় ইনিংস খেলতে না পরা তো বিপদেরই লক্ষণ। স্বস্তির বিষয়টা এটাই, পিটের ওই বলটির পরেই আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের খেলার ইতি টানলেন মাঠের দুই আম্পায়ার নিতিন মেনন ও জোয়েল উইলসন।

তাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষে তুলতে পারল ৩ উইকেটে ১০১ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে পিছিয়েও ১০১ রানে। ওপেনার মাহমুদুল ৩৮ আর মুশফিকুর রহিম ৩১ রান নিয়ে আগামীকাল তৃতীয় দিন শুরু করবেন। বাংলাদেশ সমর্থকেরা নিশ্চয় চাইবেন, কাল এ দুজনের মধ্যে অন্তত একজনের ইনিংস তিন অঙ্কে পৌঁছাক। নয়তো আরেকটি পরাজয় চোখরাঙানি দিতে থাকবে।

মিরপুর টেস্টে শুরুর আগে ৩ সংস্করণ মিলিয়ে সর্বশেষ ৩০ ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি। এমন বাজে ফর্ম নিয়ে পরশু ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে নাজমুল জানান, তাঁর ব্যাটিং জ্ঞান সাংবাদিকদের চেয়ে বেশি। কোন পিচে কী ধরনের শট খেলতে হবে, সেটাও তাঁর জানা।

কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কের কথার সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া গেল না খুব একটা। কাল টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে ৭ রান করে আউট হওয়া নাজমুল দলের প্রাথমিক বিপর্যয়ে আজ আবারও হাল ধরতে ব্যর্থ। কেশব মহারাজের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ার আগে করতে পেরেছেন ২৩ রান।

অথচ বাংলাদেশে তো বটেই, এশিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্টে ব্যাটিং করতে নেমেই কাইল ভেরেইনা পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরির দেখা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপদে হাল ধরে চুপচাপ নিজের কাজটা করে গেছেন। প্রথমে উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১১৯, পরে ডেন পিটের সঙ্গে নবম উইকেটে গড়েছেন ৬৬ রানের জুটি। ভেরেইনা, মুল্ডার ও পিটের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়েই প্রথম ইনিংসে ২০২ রানের লিড নিতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

কাল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশ অলআউট হয় মাত্র ১০৬ রানে, যা মিরপুরে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। তবে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করে। তখন অনেকেই ধরে নেন, আজ প্রথম সেশনের শুরুতেই বাকি ৪ উইকেট তুলে নিয়ে সফরকারীদের লিড খুব বেশি বাড়তে দেবেন না বাংলাদেশের বোলাররা।

কিন্তু ভেরেইনা-মুল্ডার যেন আজ ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিলেন। ক্রিজে আঁকড়ে পড়ে না থেকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছেন, দুজন সুইপ শট খেলার হিড়িক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগমুহূর্তে হাসান মাহমুদ টানা দুই বলে মুল্ডার ও কেশব মহারাজকে আউট করলেও পিটের সঙ্গে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন ভেরেইনা। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসটা লম্বা হয় মধ্যাহ্ন বিরতির পর আরও সোয়া এক ঘণ্টা। প্রোটিয়াদের শেষ দুটি উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভেরেইনা শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগেই সফরকারীদের সংগ্রহ ৩০০ আর লিড ২০০ পেরিয়ে যায়।

ইতিহাস বলছে, প্রথম ইনিংসে ২০০ বা তার চেয়ে বেশি রানে পিছিয়ে থাকার পর বাংলাদেশ কোনো টেস্ট জিততে পারেনি। হার এড়াতে পেরেছে মাত্র ৩ বার, যার দুটিতেই ছিল বৃষ্টির আশীর্বাদ। এবার কী হবে, তা আগামীকালই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ১০৬ ও ২৭.১ ওভারে ১০১/৩ (মাহমুদুল ৩৮*, মুশফিক ৩১*, নাজমুল ২৩, সাদমান ১, মুমিনুল ০; রাবাদা ২/১০, মহারাজ ১/৩৩)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৮৮.৪ ওভারে ৩০৮ অলআউট (ভেরেইনা ১১৪, মুল্ডার ৫৪, পিট ৩২, ডি জর্জি ৩০; তাইজুল ৫/১২২, হাসান ৩/৬৬, মিরাজ ২/৬৩)।

* দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ১০১ রানে পিছিয়ে।