ছবি-সংগৃহীত।
মর্নিংসান অনলাইন //
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের ৫ আগস্ট পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেককেই ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কেউ সাবেক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, কেউ ছিলেন সংসদ সদস্য। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দলীয় ও সরকারপ্রধান দেশ ছাড়ার পর সবই হারিয়েছেন তারা। সবাইকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সপ্তাহ চারেকের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের আলোচিত ডজনখানেক নেতা। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সবাইকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। কাউকে কাউকে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে তারা দিচ্ছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে নিজেদের দায় এড়াতে না পারলেও তারা সবাই বলছেন, সব দলীয় ও সরকারপ্রধানের (শেখ হাসিনা) নির্দেশে করেছেন। তাদের দিয়ে অন্যায্য কাজ করানো হয়েছে বলে অকপটে স্বীকারও করেছেন অনেকেই। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনেকের মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠভাজন ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। তিনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি অনেক অভিযোগের কথাই স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে উপাচার্য ও অধ্যক্ষ নিয়োগের কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
১৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর বারিধারা থেকে দীপু মনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন (২০ আগস্ট) তাকে মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শেখ হাসিনার আরেক ঘনিষ্ঠভাজন ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত সালমান এফ রহমান জিজ্ঞাসাবাদে দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দাবি করেছেন, নতুন নতুন প্রকল্প বের করার তাগাদা দিতেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা। নতুন প্রকল্প মানেই বড় অঙ্কের কমিশন। এর সবকিছুই জানতেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি কখনো তাতে না করেননি।
দফায় দফায় রিমান্ডে যাওয়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন, তিনি এবং সালমান এফ রহমান কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। রিমান্ড শুনানির সময় আনিসুল হক বলেন, আমরা দুজনই (আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান) কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আমি নির্দোষ। ঘটনার বিষয় কিছুই জানি না। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
রিমান্ডে থাকা সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ৫ বছর আমি মন্ত্রী ছিলাম। পরের ১০-১১ বছরে আমরা সরকারে ছিলাম না। তবে ১৪ দলে জোটের শরিক ছিলাম। জোটের শরিক হিসাবে আমরা শেখ হাসিনাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছি। যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টাকা পাচারকারীদের ধরতে বলেছিলাম। উনি চীন সফরে যাওয়ার আগেও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমাদের কোনো পরামর্শই তিনি কানে নেননি।
জিজ্ঞাসাবাদে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই তার আচার-আচরণ এমন ছিল যে, দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। তিনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।