আবুল কাশেম (বামে) ও শাহেদ আহমদ লিটন ডানে, ছবি-সংগৃহীত।
বিশেষ প্রতিবেদক //
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) চোরাচালান রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা নিষিদ্ধকৃত অবৈধ ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান বাণিজ্য।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ঢালাও ভাবে চলে এই অবৈধ চোরাচালান বাণিজ্য। এসময় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়েন এই অনৈতীক কর্মকান্ডে। কিন্তু পঠ পরিবর্তন হয়ে যায় ছাত্র-জনতা আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে স্বৈরাচার হাসিনা গদি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু হয় দেশের সর্ব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য সহ অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর নজরদারি। এর অংশ হিসেবে সমগ্র দেশের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়ও চলছে নিয়মিত অভিযান। কিন্তু কোন ভাবেই থামছেনা চোরাচালান বাণিজ্য। পূর্বে এসকল উপজেলা সমুহের সীমান্ত এলাকায় নেতৃত্ব দিতো আওয়ামী লীগের দোসররা এখন হাত বদল হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সহযোগী সংগঠনের কতিপয় অসাধু অর্থ পিপাষু নামধারী নেতা-কর্তারা।
ইতিমধ্যে চোরাচালান বাণিজ্য-চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ায় অনেকের নাম বিভিন্ন জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক সহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলেও রহস্যজনক কারনে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি সিলেট জেলা বিএনপি সহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের। এনিয়ে রয়েছে সংশয়। নামেমাত্র হাতেগুণা কয়েকজনকে বহিস্কার দেখিয়ে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যকলাপ।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হামলা-মামলা চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছিলো ঠিক সেই পথেই হাঁটছে এসব লেবাসধারী নেতাকর্তা চোরাকারবারী সিন্ডিকেট চাঁদাবাজ চক্র। এসকল উপজেলার সীমান্ত এলাকা এখন তাদের দখলে। বিজিবি-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে চাঁদা আদায় হরিলুট। এদের বিরুদ্ধে বস্ত-নিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করা মাত্র দৌড়ঝাপ শুরু হয় আদালত পাড়া-মহল্লায়। হুমকির মুখে থাকতে হয় সংবাদকর্মী ও পত্রিকার মালিকদের। এতে যদি মামলা দিয়ে কাজে না আসে তাহলে চক কষা হয় সাংবাদিকদের উপর ষড়যন্ত্রমুলক হামলা-নির্যাতন চালানোর। প্রয়োজনে কৌশল কাটিয়ে যে কোন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করিয়ে ফাঁসানো হয় মোকাদ্দমায়। এর আগে একই পথ অবলম্বন করেছিলো সেই স্বৈরাচার ঘাতক হাসিনা সরকার। কারন চোরাকারবারীদের কথায় রাষ্ট্রিয় ভাবে কিছু আইন প্রশাসনের লোককে লেলিয়ে দিয়ে তাদের বাদি বানিয়ে অনেক সাংবাদিক’কে মাদকসহ আইসিটি মামলায়ও ফাঁসিয়ে চালান দিয়ে রাখতো। একই পথ অবলম্বনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে ওই চোরাকারবারী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট চক্র। তারা নিজেদের দলীয় প্রভাব বিস্তার ও পদ টিকিয়ে রাখতে উর্ধ্বতন নেতাকর্মীদের নিকঠ তদবির বাণিজ্য পরিচালনা সহ সকল ধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি তার কোন ব্যতিক্রম ঘটছেনা।
এদিকে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে জৈন্তাপুরের কথিত যুবদল নেতা আবুল হাসিম, গোয়াইনঘাট উপজেলার নলজুড়ি এলাকার যুবদল নেতা আবুল কাশেম ও শাহেদ আহমদ লিটন ওরফে বাবলা লিটন। এছাড়াও রয়েছেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন এলাকার ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মান্নান ওরফে আব্দুল মান্নান। তামাবিল ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় করিম নামক এক জনৈক ব্যক্তি। জৈন্তাপুরের রাজবাড়ী ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় ব্যান্ডিজ করিম, ল্যান্টিন শহীদ, আরমান ও সামাদ। অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মাসুম নামের এক জনৈক ব্যক্তি। এভাবে অন্য উপজেলায়ও ছড়িয়ে ছিঠিয়ে রয়েছে অনেক রাঘব বোয়াল চোরাকারবারী চাঁদাবাজ চক্র। বরাবরের মতো তাদের কোন বক্তব্য নিতে গেলে তারা এরকম কোন ঘটনার সাথে জড়িত নহে বলে অস্বীকৃতি জানায়। অথচ এই চক্রটি অতি গোপনে চোরাই বাণিজ্যসহ বিজিবি-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত পাহাড়সম সংবাদ দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলসহ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। রহস্যজনক কারনে আজো তারা থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও অনেকের নাম আবার বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু বাস্তব রুপ ভিন্ন।
গতকাল বুধবার রাতে বহুল আলোচিত যুবদল নেতা আবুল কাশেমের সহীত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদক’কে বলেন, চোরাচালান বা চাঁদা আদায়ের প্রশ্নই উঠেনা। তিনি বলেন, এক্সপোর্ট-ইনপোর্ট এর মাধ্যমে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছি আমাকে একটি চক্র ঈর্শান্বিত হয়ে রাজনৈতীক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসময় এক্সপোর্ট-ইনপোর্ট এর কাগজাদি দেখানোর কথা বললে তিনি ঘন্টাখানেকের ভেতরে প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে পাটিয়ে দিবেন বলে জানালেও আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোন কাগজাদি প্রেরণ করেননি। তার বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ্যাডভোকেটের মাধ্যমে কারণ দর্শাতে সেই পত্রিকাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের নিকঠ চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এসময় প্রতিবেদক জানতে চান চিঠির কোন কপি দেখানো বা পাঠানো যাবে কি না তখন তিনি কোন সদ্বত্তোর দেননি। একপর্যায় তিনি প্রতিবেদক’কে বলেন কাইয়ুম ভাইও বিষয়টি জানেন আমাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সহযোগীতা চেয়ে বলেন উপরে আল্লাহ রয়েছেন আর কিছু বলার নেই।
আবুল কাশেমের অপর ঘনিষ্ট সহচর শাহেদ আহমদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের পূর্বে আমি ব্যবসা করেছি। তখন করিম ও স্থানীয় এলাকার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিজিবি-পুলিশের নামে চাঁদা উত্তোলন করলেও আমি বিএনপির কর্মী হলেও তাদের কোনদিন চাঁদা দেইনি। এসময় তিনি বলেন, সাবেক তামাবিল ক্যাম্প কমান্ডার একদিন অভিযান চালিয়ে আমার ২শ’৭০ বস্তা ভারতীয় চিনি নিয়ে গেলে আর আমি এই ব্যবসায় জড়িত হইনি। তখন এ ঘটনায় কোন মোকাদ্দমা করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি কোন চোরাকারবারি বা চাঁদা আদায়ের সাথে জড়িত নহে। আবুল কাশেম সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ লেখালেখি করে কিছু করতে পারবেনা। কয়েকদিন আগেও হরিপুর এলাকার এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার বাক-বিতন্ডা হয়েছে সেটা নিয়ে সে এখন ব্যস্থ্য। তিনি বলেন, তার পদ খাওয়া এতো সহজ না।