• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিগত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো বিদ্যুৎ টেকসই উন্নয়নে দুর্নীতি: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা

admin
প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর, বুধবার, ২০২৪ ২১:১৬:৫৬
বিগত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো বিদ্যুৎ টেকসই উন্নয়নে দুর্নীতি: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি-সংগৃহীত।
ঢাকা //


অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের পথে না হেঁটে উল্টো বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়াই গত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো বলে মনে হচ্ছে।

তবে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া ওই সব পদ্ধতি বন্ধ করে দিয়ে টেকসই বিদ্যুৎ নীতিমালা ও পদ্ধতি অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। ‘বিদ্যুতের ট্যারিফ ঠিক করতে জ্বালানি নিয়ন্ত্রক কমিশনকে (বিইআরসি) পুনর্গঠন করেছি আমরা। একই সঙ্গে আমরা সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধনে কাজ করছি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখছি’ বলেছেন ফাওজুল কবির খান।

বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এসবের পাশাপাশি আমরা স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (আইপিপি) কাছ থেকেও সরে আসছি এবং আরও টেকসই বিদ্যুৎ নীতিমালা কার্যকরের পথে হাঁটছি।

৩ দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অন্তবর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, অসম অনেক বিদ্যুৎ চুক্তি ও চলমান সংকটের চাপে জ্বালানি সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। গুণমান, ক্রয়ক্ষমতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে ক্রমশ ব্যবধান বৃদ্ধির পাশাপাশি জ্বালানি ব্যবহারে সবার সম-অধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।

২০৪১ সালের মধ্যে ৪০শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দরকার স্পষ্ট নীতিমালা, বেসরকারি খাতের শক্তিশালী অংশগ্রহণ এবং জ্বালানি উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে রূপান্তর। শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, নিবিড় বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রয়োজন এমন খাতে ভর্তুকিযুক্ত নবায়নযোগ্য শক্তিকে গ্রহণ করা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমিকে সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য প্রকল্পে পুনর্ব্যবহার এই রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

নীতিনির্ধারক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদার, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারী ও অর্থদাতা, নাগরিক সমাজের নানান সংগঠন ও তরুণ-যুবাসহ ৩শ’র বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এবারের তিনদিন ব্যাপী এই দ্বিতীয় ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০’ সম্মেলনে একত্রিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের সফলতার ওপর দাঁড়িয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির পথে অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করা এবং টেকসই উন্নয়নে সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বর্ধিত কলেবরে ২৩ টি সংগঠনের মিলিত উদ্যোগে এবারের এ আয়োজন হচ্ছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম এবং রহিম আফরোজ নবায়নযোগ্য শক্তি লিমিটেডের (আরআরইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনাওয়ার মিসবাহ মঈনসহ বিশেষ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দীপাল চন্দ্রবড়ূয়া, ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সাইনান হাউটন, শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, লিডিন্যাকপিল, আবুল কালাম আজাদ তাদের সংহতি প্রকাশ করেন।

তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাইনান হাউটন বলেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নবায়নযোগ্য শক্তির রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভিয়েতনাম, দক্ষিণআফ্রিকা, পাকিস্তান এবং চীনের মতো দেশগুলো বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, এমনকি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও; আর রূপান্তরগুলো বাস্তবায়নে বছর নয়, মাত্র কয়েক মাস লেগেছে। এই সাফল্যগুলো প্রমাণ করে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে বড় কিছু করা সম্ভব।

এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট ফর ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয় কলি ডিন্যাকপিল উল্লেখ করেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপান্তর করাটাই বড় একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে গরমে ৪০০০- ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। আবার বিদ্যুতের এফিসিয়েন্ট ব্যবহারেও৩০%- ৪০% বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো যেতে পারে।

বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব হাসান মেহেদী তার বক্তব্যে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরোনির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে জোর দিয়ে উচ্চপর্যায়ের প্যানেলিস্ট, প্রতিনিধি এবং অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি সম্মেলনটি সব পক্ষের যথাযথ অংশগ্রহণ, বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি এবং কৌশলগত সংলাপের প্রতিশ্রুতিদেয়। টেকসই পরিবর্তনকে সামনে রেখে সম্মেলনটি পাঁচটি মূল বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছে। এগুলো হলো নীতিরসমন্ব, প্রাতিষ্ঠানিকসংস্কার, আর্থিকব্যবস্থা, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং সামাজিকওপরিবেশগত বিবেচনা।

এছাড়াও সম্মেলনে একই সাথে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশে সবুজ পরিবর্তনের জন্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে নীতির সমন্বয় এবং ন্যায় সঙ্গত ও সবুজ পরিবর্তনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সমালোচনামূলক বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে একটি টেকসই ভবিষ্যত গঠনে সবুজ এবং ন্যায্য পরিবর্তনের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপগুলো চালিয়ে যেতে এই সম্মেলনটি ১৩ডিসেম্বর চলবে।
মতামত জানান