ওসি তাজুল ইসলাম, ফাইল ছবি।
জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, জৈন্তাপুর থেকে ঘুরে এসে (সিলেট প্রতিনিধি)
সিলেটের জৈন্তা, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে ঢুকছে অবৈধ ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান। নামেমাত্র বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অভিযান পরিচালনা করলেও দায়িত্বরত ক্যাম্প কমান্ডারদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে নিম্নমানের বিভিন্ন অবৈধ ভারতীয় পণ্যসহ গরু-মহিষ, মাদক, অস্ত্র চোরাচালান ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে কানাচে।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার পর চোরাচালানীরা আরও বেশি তৎপড় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে চোরাই পথে আসা এসব পণ্য সরবরাহে সহযোগীতা করে আসছিল আওয়ামী পন্থি নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর নতুন আঙ্গিকে আরেকটি দূর্বৃত্ত দল একই পথে হাটছে।
কতিপয় বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার ছাড়াও ঘুষ বাণিজ্যে এগিয়ে রয়েছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল। সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ক্যাম্প কমান্ডার ও তাজুলের ছত্রছায়ায় অত্র এলাকার চোরাকারবারীরা দেদারসে চোরাচালান বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন অনূসন্ধ্যানে জানা গেছে, গত সোম-মঙ্গলবার রাতে রাজবাড়ি ক্যাম্প এলাকা হয়ে অন্তত প্রায় সাড়ে চারকোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ পণ্য এসে ঢোকেছে। এসব পণ্য সিলেট-তামাবিল রোড হয়ে পরিবহণযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্থে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জৈন্তাপুর উপজেলার একাধিক দোকান ব্যবসায়ী প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, সোম-মঙ্গলবার ছাড়াও প্রতিনিয়ত এসব পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। এ থেকে ক্যাম্প কমান্ডার ও পুলিশরে ওসি তাজুল মিলে দৈনিক কুড়িলক্ষ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘদিন জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল দায়িত্ব পালনের কারনে জিরো থেকে বনে গেছেন লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক। একই ভাবে রাজবাড়ি ক্যাম্প কমান্ডারও হিরো বনে গেছেন। তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ওসি তাজুলের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব ছিল ওইসব নেতাকর্মীদের। প্রকাশ্যে তিনি চোরাকারবারি লাইন দিয়ে থাকতেন। যারা বেশি চাঁদা উত্তোলন করে দিবে তাদের হাতেই তিনি চোরাই লাইন তুলে দিতেন। তখনকার সময় তার ভয়ে বিরোধিদলের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে বনে-জঙ্গলে থাকতে হয়েছে। অনেকে আবার জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি অনেক সংবাদকর্মীরাও। বর্তমান সময়ে এসে কতিপয় অসাধু বিরোধিদলের কর্তাদের হাত করে সে তার খোলস পাল্টিয়ে আগের মতই রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। এর আগেও এই রাঘব বোয়াল ওসি’র বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জাতিয় দৈনিক পত্রিকা সহ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে সিলেট ৪ আসনের দূর্নীতিবাজ কথিত এমপি ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদায়ী জেলা পুলিশ সুপার ও জৈন্তা-কানাইঘাট থানার সার্কেল অফিসার তাকে এই কাজে উৎসাহি করেছেন। বিনিময়ে সেই টাকার বাগবাটোয়ারা সমান অংকে ভাগিয়ে নিয়েছেন। রহস্যজনক হলেও সত্য যে, তার নেতৃত্বাধীন আরও বেশ কয়েকজন কথিত হলুদ সাংবাদিক জড়িত রয়েছেন। এছাড়া ওই উপজেলায় তার হাত ধরে অনেক চোরাকারবারী এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অনেকে গড়ে তুলেছেন বিলাস বহুল বাড়ি, গাড়ি সহ কিনেছেন বাসাবাড়িও। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন এসব চোরাকারবারীদের ধন-সম্পদের হিসেব নিলে বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা আরও দাবি করেন সিলেটের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তাদের তালিকা থাকা সত্বেও কোন আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা। তারা এ ব্যাপারে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অপরদিকে সম্প্রতি গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট থানা পুলিশ এর প্রতিকার রোধে কাজ করে গেলেও অন্যান্য থানা পুলিশের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি লাজুক অবস্থা সীমান্ত পাহাড়া দেয়া বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র)। তাদের হীণ উদ্দেশ্যের কারনে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে অনেক বাংলাদেশি অকালেই প্রাণ হারাচ্ছেন। এ থেকে রেহাই মিলছেনা শিশু-কিশোর থেকে বায়োবৃদ্ধরা। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের পর ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসে কড়া নজরদারি সীমান্তে বাড়ানোর ঈঙ্গিত দিলেও সরেজমিন রুপ ভিন্ন।
এবিষয়ে জানতে রাজবাড়ি ক্যাম্প কমান্ডার এর সরকারী মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করে বলেন আমি এখন ব্যস্থ্য আছি পরে কথা বলুন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তার মুঠোফোন রিসিভ হয়নি। একপর্যায় হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এতেও তিনি কোন সাড়াশব্দ দেননি। অন্যদিকে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুলের মুঠোফোনে কলদিলে তার মুঠোফোন রিসিভ না হওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।