• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলংয়ের জুমপাড় চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব!

admin
প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল, বুধবার, ২০২৫ ০০:৩৯:০২
জাফলংয়ের জুমপাড় চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব!

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি //


সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বালিঘাট মন্দিরের জুম পাড় নামক স্থানে রাতের আধারে ফেলুডার মেশিন দিয়ে দেদারসে চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন।

জুম পাড় কেটে পাথর উত্তোলনের কারণে হুমকির মূখে রয়েছে শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দিরসহ অসংখ্য ফসলী জমি, পান সুপারীর বাগান, চা বাগান ও বসতবাড়ি।

বিগত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। শুধু জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।

পাথর লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.বদরুল হুদা বাদী হয়ে পৃথক-পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। কিন্ত ঘটনার প্রায় কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে পাথর লুট-পাটকারী মামলার আসামীরা এখনো রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগের দোস’র বিগত সময়ে যারা জাফলংয়ে লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ওইসব দোসরদের পূর্ণভাসনের জন্য নামধারী কথিত কিছু বিএনপি প্রভাবশালী নেতা আড়াল থেকেই কাঠি নাড়ছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, হেনরিলামীন ও ট্রাক-শ্রমিক নেতা ছমেদের নের্তৃত্বে জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি, মন্দির’র জুমপাড়, জিরোপ্রয়েন্ট, বাবুল’র জুম এলাকা, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জাফলং সেতু সংলগ্ন পাথর কোয়ারী এলাকায় অবৈধভাবে দানবযন্ত্র ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনে চলছে মহোৎসব।

অবৈধ ভাবে নিষিদ্ধকৃত পরিবেশ বিধ্বংসি ফেলুডার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে জুমপাড় এলাকায় শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দির, বল্লাঘাটের পুরাতন পর্যটন স্পট, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, শত হেক্টর ফসলী জমি, চা বাগান, জাফলং সেতু, জাফলং বাজার, নয়াবস্তী, কান্দুবস্তী গ্রামের বসতবাড়ী ও খাসিয়া সম্পাদায়ের, পান সুপারীর বাগান সহ আশ পাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশস্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোকজন জানান, পাথর খেকোদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের মোঠা অংকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয় এ কারণে প্রশাসন নিরব থাকে। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক সাথে মিলেমিশে বীরদর্পে ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তারা অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ চলমান রেখেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযান পরিচালনাকারীদল ঘটনাস্থল পৌছানোর আগেই আগাম খবর চলে যায় পাথর খেঁকো চক্রের কাছে যে কারণে বল্লাঘাট জুম পাড় এলাকায় মন্দিরের মাটি কেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৈচিএের কাল্পনিক দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের অভয়ারণ্য জাফলং। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ ও প্রকৃতি কন্যা জাফলং এর প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে ভ্রমন পিপাসু হাজারও পর্যটক। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে অপরূপ স্যেন্দর্যের লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং তার নিজস্ব রূপলাবণ্য। এসব পাথর খেকো চক্রের সদস্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নামধারী নেতাদের কাছে আজ পরাস্ত প্রকৃতি কন্যা জাফলং।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধধজ্ঞা জারী থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কোন আইনত ব্যবস্থা। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরে অবহেলা, থানা পুলিশের গাফলাতির কারনে পাথর উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে চা বাগান, ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে ফসলী জমি ও আবাসস্থল। এসব এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন ও অপসারণ করতে খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও এসব নিয়মের কোন ধারে কাছেই নেই কেউ।

এছাড়াও মন্দিরের জুমপাড় এলাকা একটি বিবাদমান এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বিগত সময়ে শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দিরের পাড় এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনের সময় মাটির পাড় ধসে, মাটি চাপায় পাচ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে উক্ত ভূমি থেকে পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিবাদমান ব্যাক্তিদের মধ্যে গুলাগুলি হয় এসময় জুমপাড় এলাকা সংলগ্ন কান্দুবস্তী গ্রামের লিটন নামের এক স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।

এব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ জানান, অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন বন্দে থানা পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।

সহকারী কমিশনার ভুমি সাইদুল ইসলাম বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের দায়ে বেশকটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, জাফলং ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেও পাথর খেকোদের থামানো সম্ভব হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ.মাহবুব মুরাদ বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর ও বালু লুটপাটের সাথে জড়িদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। সরকারী বিধি নিষেধ থাকা সত্বেও তা অমান্য করে অবাধে জুম কেটে পাথর উত্তোলন। পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পরিবেশ অধিদপ্তর,র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় এলাকবাসী।

মতামত ব্যক্ত করুন।